Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ডেঙ্গুর ভয়াল থাবা

সিনিয়র সহকারী সচিব ও ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সিনিয়র সহকারী সচিব ও ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু কেড়ে নিল ১৬ জনের প্রাণ। এর মধ্যে তিনটি মৃত্যুর ঘটনা মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে গর্ভবতী এক সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যু। এই তালিকায় ব্যাংক কর্মকর্তা ও মেডিকেল ছাত্রীও রয়েছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

অনাগত সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সবাইকে ছেড়ে চলে যান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এসএম নাজিয়া সুলতানা। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সশরীরে অফিসে আসতে না পারলেও কাজের প্রতি একনিষ্ঠ থাকায় বাসা থেকে অনলাইনে প্রতিদিন অফিস করেছেন। তার মানবিকতা সহকর্মীরা ভুলতে পারছেন না। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এক শোকবার্তায় মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তারা।

বাণিজ্যমন্ত্রী শোকবার্তায় বলেন, নাজিয়া সুলতানা অত্যন্ত মেধাবী ও চৌকস কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি তার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। নাজিয়া সুলতানার অকাল মৃত্যুতে আমরা একজন সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তাকে হারালাম। এসএম নাজিয়া সুলতানা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউ সেল উইংয়ে কর্মরত ছিলেন। সিনিয়র সচিব তার শোকবার্তায় বলেন, নাজিয়া সুলতানা ছিলেন একজন দক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ কর্মকর্তা। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আগে অন্তঃসত্ত্বার কারণে বাসায় বসেই নিয়মিত অফিস করেছেন তিনি। তার সহকর্মী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মিনাখী যুগান্তরকে জানান, তিনি এতটাই মানবিক ছিলেন তার একটি উদাহরণ আমি নিজেই। কিছুদিন আগে আমার নিজের মা অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তির পর দুসপ্তাহ অফিসে আসতে পারিনি। কিন্তু তিনি বারবার ফোন দিয়ে আমার মায়ের খোঁজ নিতেন। আমি জানি মায়ের সঙ্গে তিনি ঢাকায় থাকতেন। তার মায়ের মতো আমার মায়েরও খোঁজ নিয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. হায়দার আলী জানান, ৩০তম বিসিএসের মেধাবী এই কর্মকর্তা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুদিন ধরে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। যুগান্তরের কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, নাজিয়া সুলতানা ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি গাইবান্ধা জেলা সদরের ভিএইড রোড এলাকার বাসিন্দা ও গাইবান্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদুন জামান মিন্টুর কন্যা। তার মৃত্যুতে রংপুর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ শোক জানিয়েছেন।

এদিকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা কান্তা বিশ্বাস। তিনি পাবলিক অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টের সহকারী পরিচালক ছিলেন। রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার তিনি মারা যান। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মঙ্গলবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা জেনেছি কান্তা বিশ্বাস ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৩ জুলাই রোববার রাতে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আড়াই বছরের আরও এক কন্যা রয়েছে তার। কান্তা বিশ্বাস ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে যোগ দেন। মৃত্যুর আগে পাবলিক অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এদিকে কান্তা বিশ্বাসের অকাল মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন তার সহকর্মী, সহপাঠীসহ বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা এসব শোক জানান।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. এখলাসুর রহমান স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। শোকবার্তায় ডা. এখলাসুর জানান, রাইসার অকাল মৃত্যুতে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ শোকাহত। মেডিকেলের শেষ বর্ষে এসে তার মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি। রাইসার স্বামী তানজিম জানান, গত ১৮ জুলাই ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে রাইসার ডেঙ্গু টেস্ট করানো হয়। এতে রেজাল্ট পজিটিভ আসে। প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে রাইসাকে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই তাকে প্লাজমা দেওয়া হয়। পরদিন তার প্লাটিলেট তিন হাজারে নামে। পরে চিকিৎসকরা প্লাজমা না দিয়ে সরাসরি ওষুধ দেন। ২১ জুলাই তার প্লাটিলেট কাউন্টের রেজাল্ট ২১ হাজার আসে। কিন্তু আজ সকালে না ফেরার দেশে চলে যান রাইসা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম