মিনিস্টারের পণ্য বাজারে সর্বজন গৃহীত
এমএ রাজ্জাক খান রাজ-চেয়ারম্যান, মিনিস্টার গ্রুপ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রশ্ন : কবে থেকে ফ্রিজ উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেছে মিনিস্টার?
এমএ রাজ্জাক খান : ২০০৫ সালে ফ্রিজ সংযোজন শুরু করি। এরপর ২০১৩ সাল থেকে নিজেরাই উৎপাদন করছি। এখন আমরা ফ্রিজ ছাড়াও এলইডি টিভি, এসি, হালকা ও মাঝারি হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য উৎপাদন করছি। গরমের মৌসুমে প্রায় ২৫-৩০ হাজার ফ্রিজ উৎপাদনসহ বাৎসরিক অন্তত ৪ লাখেরও বেশি ফ্রিজ উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকি। মিনিস্টারই প্রথম ফ্রিজ এবং ইনভর্টার এসিতে ১২ বছর গ্যারান্টি এবং নির্দিষ্ট মডেলের টিভিতে প্যানাল ও পার্টসে ৫ বছর গ্যারান্টিসহ সার্ভিসে ১০ বছরের ওয়ারেন্টি ঘোষণা দিয়েছে। দেশের সব জেলায় নিজস্ব শোরুম এবং ডিলার ফ্র্যাঞ্চাইজিং শোরুম রয়েছে ১ হাজারের বেশি। ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রিতে বাজারে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখন মিনিস্টার ভালো অবস্থানে রয়েছে।
প্রশ্ন : মিনিস্টার ফ্রিজের বিশেষত্ব কী। মান নিয়ে কিছু বলুন?
এমএ রাজ্জাক খান : বিভিন্ন দামে বিভিন্ন ধরনের ফ্রিজ তৈরি করে থাকে মিনিস্টার। মিনিস্টারের রয়েছে স্পেসিফিকেশন, আকৃতি, ডিজাইন। প্রতিটি পণ্যের বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করেই দামের ভিন্নতা রয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি ফ্রিজে যুক্ত করা হয়েছে এমন সব প্রযুক্তি, যা সঠিক তাপমাত্রা-হিমায়িত খাবারের ভিটামিন এবং দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করার জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখে। সম্পূর্ণ অটোমেটিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিটি ফ্রিজ। একই সঙ্গে ৬৬ শতাংশ এনার্জি সেভিং কম্প্রেসার ব্যবহার করা হয়। যার ফলে প্রতিটি ফ্রিজ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
প্রশ্ন : বছরের কোন সময় ফ্রিজ বেশি বিক্রি হয়? কী ধরনের প্রতিযোগিতা করতে হয়?
এমএ রাজ্জাক খান : সাধারণত গরমের মৌসুমে দেশের বাজারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) এবং ফ্রিজের চাহিদা ও বিক্রি বেড়ে যায়। এবারের গ্রীষ্মে তো প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে। যে কারণে ফ্রিজ বিক্রি প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি বেড়েছে। পাশাপাশি এসি এবং ফ্যানের বিক্রিও ভালো। এ সময়টায় বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য বিক্রিতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। তবে এ প্রতিযোগিতায় আমরা সর্বদাই এগিয়ে কারণ, আমরা পরিবেশবান্ধব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের পণ্য উৎপাদন করে থাকি এবং সুলভমূল্যে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে থাকি। আমরা কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী। মান ও গুণের সমন্বয়ে তৈরি আমাদের পণ্য তাই বাজারে সর্বজন গৃহীত। প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য আমরা কখনো মানের পরিবর্তন করি না, যার ফলে সুবিবেচক ক্রেতারা আমাদের পণ্যই কিনে থাকেন।
প্রশ্ন : এ শিল্পে কী কী সমস্যা রয়েছে? সরকারের কী ধরনের নীতিসহায়তা দরকার?
এমএ রাজ্জাক খান : বাংলাদেশে শিল্পের কাঁচামাল বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়, যা এ খাতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার মূল কারণ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় শিল্পগুলোর জন্য আরও এক থেকে দুবছর কর সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। কিন্তু হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতের কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এতে করে পণ্যমূল্য বাড়বে এবং শিল্পের সক্ষমতা কমবে।
প্রশ্ন : অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইলেকট্রনিক্স শিল্প কী ভূমিকা রাখছে?
এমএ রাজ্জাক খান : বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস শিল্প বর্তমানে দ্রুত বর্ধনশীল এবং সম্ভাবনাময় শিল্প। আমি মনে করি দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতের বিকাশের ফলে বিপুল পরিমাণ পণ্যের আমদানি ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে এ শিল্প হয়ে উঠেছে সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরে পুরো বিশ্বে আমাদের ইলেকট্রনিকস পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছি।
প্রশ্ন : মিনিস্টার গ্রুপের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
এমএ রাজ্জাক খান : শুধু স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স বাজারেই নয়, আমাদের উপস্থিতি প্রসারিত হচ্ছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারেও। দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে পৌঁছে দিতে চাই মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য। তখন মিনিস্টার-এর পণ্যেই হবে আমাদের দেশের অ্যাম্বাসেডর।
এছাড়া গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমরা আমাদের পণ্যকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে পণ্যগুলোর ব্যাপকসমৃদ্ধ সাধন করছে আমাদের দক্ষ টিম। বিভিন্ন কৌশলগত অংশীদারত্ব এবং সহযোগিতার মাধ্যমে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে দেশীয় বাজারে শেয়ার বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা নিরন্তন কাজ করে যাচ্ছি। আমরা একটি ই-কমার্স সাইট ‘ই-রাজ’ প্রবর্তন করেছি দেশব্যাপী বিস্তৃত গ্রাহকদের সন্নিকটে পৌঁছানোর জন্য।
প্রশ্ন : ক্রেতার রুচি-পছন্দের সঙ্গে ফ্রিজ উৎপাদনকারীদের কীভাবে তাল মেলানো দরকার?
এমএ রাজ্জাক খান : দিন যত অতিবাহিত হচ্ছে, ক্রেতাদের চাহিদা এবং রুচিরও তেমন পরিবর্তন ঘটছে। ফলে আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের থাকতে হচ্ছে আরও বেশি সক্রিয়। ভোক্তারা সব সময় আশা করে কম টাকায় ভালো ও উন্নত পণ্য কেনার। আর তাদের কথা চিন্তা করে মিনিস্টার গ্রুপ দেশের মধ্যেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করছে নানা মডেলের ও নানা ডিজাইনের পণ্য। সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে আমরা সব সময় পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার করে থাকি যা আমাদের করেছে অন্যদের থেকে অনন্য। আমি মনে করি, প্রতিটি উদ্যোক্তারই উচিত ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে তাদের পণ্য তৈরি করা।