Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সফর শেষে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ

স্বাধীন মতপ্রকাশ করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক হচ্ছে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বাধীন মতপ্রকাশ করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক হচ্ছে

সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ অলিভিয়ার ডি শুটার -যুগান্তর

স্বাধীনভাবে কাজে বিশ্বাসী সুশীল সমাজের ওপর সরকারের এনজিওবিষয়ক ব্যুরো এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নানাবিধ প্রভাববিস্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষ রেপোটিয়ার অলিভিয়ার ডি শুটার। তিনি বলেন, এই আইনের অধীনে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার প্রয়োগের কারণে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো দেশটি যে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে চাচ্ছে, কেবল তাদেরই শঙ্কিত করবে না বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশে ১২ দিনের সফর শেষে সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চরম দারিদ্র্য এবং মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ রেপোটিয়ার ডি শুটার এসব কথা বলেন। অলিভিয়ার ডি শুটার ২০২০ সালের মে থেকে চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ রেপোটিয়ার হিসাবে কাজ করছেন। তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল কর্তৃক নিয়োগকৃত এবং বিশেষ প্রক্রিয়ার অংশ। ২০২৪ সালের জুনে বিশেষ রেপোটিয়ার তার বাংলাদেশবিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদন মানবাধিকার কাউন্সিলে পেশ করবেন। 
বাংলাদেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমানো, শহরাঞ্চলে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি এবং সামাজিক সুরক্ষাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে প্রত্যাশিত স্তরে উন্নীত হওয়ার পর একটি অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন মূলত তৈরি পোশাকশিল্পের মতো একটি রপ্তানি খাত দ্বারা ব্যাপকভাবে চালিত, যা সস্তা শ্রমের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। মানুষকে দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে একটি দেশ তার কাঙ্ক্ষিত সুফল বা উন্নয়ন ভোগ করতে পারে না। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে জরুরি মানবিক প্রয়োজন মোকাবিলায় দাতাদের অবদান কমে যাওয়া অনভিপ্রেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডি শুটার সরকারকে ২০২৬ সালে এলডিসি মর্যাদা থেকে উন্নীতকরণের সুযোগকে ব্যবহার করে তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভরতা পুনর্বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানান। এর যুক্তি হিসাবে দেখান, এই শিল্প ৪ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের বর্তমান রপ্তানি আয়ে শতকরা ৮২ ভাগ অবদান রাখছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যত উন্নীতকরণের পথে এগোচ্ছে, তত এটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ট্যাক্স-প্রণোদনা প্রদান এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, কর্মীদের শিক্ষিত করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সামাজিক সুরক্ষার উন্নতিতে সরকারকে আরও বেশি সময় ও সম্পদ ব্যয় করা প্রয়োজন। এজাতীয় উদ্যোগ শুধু সুনামের চিন্তা করে এমন বিনিয়োগকারীদেরই আকৃষ্ট করবে না বরং এটি বাংলাদেশে উন্নয়নের একটি নতুন রূপরেখা তৈরি করবে, যা বৈষম্যমূলক রপ্তানি সুযোগের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ চাহিদা দ্বারা চালিত হবে।
সফরকালে তিনি সারা দেশ ভ্রমণ করেন এবং দারিদ্র্যসীমায় থাকা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, দেশ সামগ্রিক আয়ের বৈষম্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করলেও এখনো বহুমাত্রিক দারিদ্র্য রয়ে গেছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, কর থেকে প্রাপ্ত জিডিপির অনুপাত উল্লেখযোগ্য হারে কম হয়েছে (প্রায় ৭.৮ শতাংশ)। সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে অর্থায়নের জন্য প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সরকারি রাজস্ব আসে পরোক্ষ কর থেকে, অথচ আয়ের ওপর প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। চিত্রটি উলটো হওয়া উচিত। উচ্চ-আয় উপার্জনকারী মানুষ এবং বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জনসাধারণের পরিষেবা এবং সামাজিক সুরক্ষার অর্থায়নে অবদান রাখতে হবে, গ্রাহকদের নয়।
জাতিসংঘ বিশেষ রেপোটিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেন। তিনি প্রায় এক মিলিয়ন শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকারকে অভিবাদন জানান। পাশাপাশি আশ্রয়শিবিরের বসবাস অনুপযোগী অবস্থার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের একটি স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়েরই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিশেষ রেপোটিয়ার জানান, এটি ‘অনভিপ্রেত’ যে, ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা শিবিরে জরুরি মানবিক প্রয়োজন মোকাবিলায় ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যৌথ পরিকল্পনার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক দাতারা এতই কম অবদান রেখেছে, যা চাহিদার মাত্র শতকরা ১৭ ভাগ।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম