জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আজ
বিশ্বশান্তি রক্ষায় প্রাণ দিয়েছেন ১৭৬ বাংলাদেশি
শহিদদের নিকটাত্মীয় এবং আহতদের সংবর্ধনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বৃহৎ ভূমিকা পালনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্ব শান্তি রক্ষায় এ পর্যন্ত ১৬৭ জন বাংলাদেশি প্রাণ দিয়েছেন। দায়িত্ব পালনকালে আহত হয়েছেন ২৫৯ জন বাংলাদেশি। শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসাবে শহিদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এবং পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করেছে। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে শান্তিরক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী দেশ হিসাবে গৌরব ও মর্যাদা লাভ করেছে। ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ কাজ শুরু করে। দীর্ঘ চার দশকে এ দশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪০টি দেশে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। এ মুহূর্তে সশস্ত্রবাহিনী ও পুলিশের ১ লাখ ৮৮ হজাজার ৫৫৮ জন সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন।
জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষায় যেসব বাংলাদেশি দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের মধ্যে সেনা সদস্য সর্বোচ্চ। এ সংখ্যা ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৩০। এছাড়া নৌবাহিনীর ৬ হাজার ৭০৪, বিমানবাহিনীর ৮ হাজার ৬৪০ এবং পুলিশবাহিনীর ২১ হাজার ২৮৪ জন শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ১৪টি দেশে ৭ হাজার ৪৩৬ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে ৫৭২ জন নারী রয়েছেন। কর্মরত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ৬ হাজার ৪৩, নৌবাহিনীর ৩৫৯, বিমানবাহিনীর ৫২২ এবং পুলিশের ৫১২ জন সদস্য আছেন। শুরু থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের যেসব শান্তিরক্ষী শহিদ হয়েছেন, তাদের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ১৪৪ জন এবং পুলিশবাহিনীর ২৩ জন সদস্য আছেন। তাদের মধ্যে গত বছরই নিহত হয়েছেন ছয়জন।
আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক সাইদা তাপসী রাবেয়া লোপা জানান, সোমবার সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রধান অতিথি হিসাবে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৩’ উদ্বোধন করবেন। পরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহিদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ৫ জন শহিদের পরিবার এবং ৫ জন আহত শান্তিরক্ষীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে এ সংবর্ধনা দেবেন। পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশও দীর্ঘদিন ধরে শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছে। বঙ্গবন্ধুর মানবতার কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারকে ধারণ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের পদযাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ২১ হাজার ২৮৪ জন শান্তিরক্ষী ২১টি দেশের ২৩টি মিশনে পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, সাইপ্রাস, সাউথ সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, লিবিয়া ও সুদানে সাতটি দেশে বাংলাদেশ পুলিশের ৫১২ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশের নারী পুলিশ কর্মকর্তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের ১৫৭ জন নারী পুলিশ শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের ১ হাজার ৭৬৬ জন নারী শান্তিরক্ষী সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।