Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

রাজধানীতে পদযাত্রায় বিএনপি নেতারা

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেব না

ভোট আর মানচিত্র নিয়ে ছিনিমিনি নয় রাজপথেই ফয়সালা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেব না

সিরিজ কর্মসূচির প্রথম দিনেই রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউন করেছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে এককভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে ফের শক্তি দেখাল দলটি।

বুধবার বিকালে উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পৃথক এ কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর মহানগরের উদ্যোগে কোনো কর্মসূচিতে এত লোকসমাগম হয়নি বলে পদযাত্রায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা জানান।

পদযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে দেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

সংকটের ফয়সালা রাজপথেই হবে। ভোট আর মানচিত্র নিয়ে জনগণ সরকারকে আর ছিনিমিনি খেলতে দেবে না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারা বলেন, সজাগ থাকুন। কোনো ষড়যন্ত্র বা ফাঁদে পা দেবেন না। সরকারকে হটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে।

দুপুর ১২টা থেকেই মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে উত্তর ও দক্ষিণের পদযাত্রাস্থলে আসতে শুরু করেন। একপর্যায়ে দুই স্থানেই নেতাকর্মীর ঢল নামে। তারা দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেন। এ সময় নেতাকর্মীদের হাতে বিভিন্ন দাবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এদিকে পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সড়কগুলোতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। তবে শেষপর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় কর্মসূচি। পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি সড়কে সৃষ্টি হয় যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে বাসাবো বালুর মাঠে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বিকাল ৫টায় পদযাত্রা শুরু করে। বিশাল পদযাত্রাটি মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। আর মহানগর উত্তরের উদ্যোগে বাড্ডার শাহজাদপুর সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শুরু হয় পদযাত্রা। সেখানে ব্যাপক নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল। পদযাত্রাটি রামপুরা হয়ে মালিবাগ আবুল হোটেলের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ, খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মহানগর উত্তরের পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, একটাই দফা-এই সরকারকে হটাতে হবে। কোনো স্বৈরাচার এমনি এমনি যায় না, তাকে হটাতে হয়। তাই এ সরকারকে হটাতে গণঅভ্যুত্থানের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সবাই প্রস্তুতি নিন।

তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে দেশের মানুষ ভোট দিতে যায় না। গত কয়েকদিন আগে একটি উপনির্বাচনে মাত্র ১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এতে বোঝা যায়-কেউ এ সরকারে অধীনে ভোট দিতে চায় না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে আর কোনো ভোট হতে দেব না। জনগণ তা হতে দেবে না।

মোশাররফ হোসেন বলেন, বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে সরকারের কোনো লাভ হয়নি। তাই তারা পাগল হয়ে গেছে। আপনারা সজাগ থাকুন। কোনো ষড়যন্ত্র বা ফাঁদে পা দেবেন না। সরকারকে হটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, আগামী নির্বাচন কোনোভাবে এই সরকারের অধীনে হবে না, করতে দেব না। শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতে জনগণ এই সরকারের অধীনে ভোট দিতে দেবে না। সরকারকেও ওই লাল দালানে ঢুকতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, রফিকুল ইসলাম বকুল, ডা. রফিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

অন্যদিকে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর বাসাবো বালুর মাঠের সামনে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ভোট আর মানচিত্র নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। জনগণকে নিয়ে পদযাত্রা শুরু হলো। সরকারের পতন ঘটিয়ে আমাদের পদযাত্রা থামবে। এই সরকারের বিরুদ্ধে সব জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধভাবে নেমে যায়, তারা টিকে থাকতে পারবে না।

সরকারের লোকজন ‘ডিমেনশিয়া’ (স্মৃতিভ্রংশ) রোগে আক্রান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুনছি আবার নাকি গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে! এই কয়েকদিন আগে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে এটা মনে হয় ওরা ভুলে গেছে। কয়েকদিন আগে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে এটাও ওরা ভুলে গেছে। কিভাবে দেশে লুটপাট হচ্ছে এটা ওরা ভুলে গেছে। নিশিরাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে এটাও ওরা ভুলে গেছে। এখন ওরা মিথ্যাচার করছে, খালেদা জিয়ার আমলে নাকি ভোট চুরি হয়েছে। হাস্যকর কথা বলছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইদানীং উদ্ভট কথা বলা শুরু করেছেন। তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমানের সময় নাকি ভোট চুরি হয়েছে। আপনি ভোট ডাকাতি করে অন্যদের চোর বলছেন। ১০ দফা দাবিতে পদযাত্রায় বিপুল উপস্থিতি প্রমাণ করে সরকারের রাজ সিংহাসন কেঁপে উঠেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, নাসির উদ্দিন অসীম, ডা. রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহানগর বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, হাবিবুর রশীদ হাবিব, তানভীর আহমেদ রবিন, মোশাররফ হোসেন খোকন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার প্রমুখ।

ছয় দিনের সিরিজ কর্মসূচির প্রথম দিনে পদযাত্রা বের করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। এছাড়া আগামীকাল শুক্রবার উত্তরের উদ্যোগে শ্যামলী ক্লাব মাঠে জনসমাবেশ রয়েছে। দক্ষিণের উদ্যোগে ২০ মে মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাজারের সামনে সমাবেশ। দক্ষিণের উদ্যোগে ২৩ মে ধানমন্ডি থেকে পদযাত্রা। ওইদিন একই সময়ে উত্তরের উদ্যোগে গাবতলী থেকে শ্যামলী পর্যন্ত হবে পদযাত্রা। দক্ষিণের উদ্যোগে ২৬ মে যাত্রাবাড়ীতে জনসমাবেশ এবং উত্তরের উদ্যোগে ২৭ মে উত্তরায় জনসমাবেশ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম