Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন: সিইসি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন: সিইসি

ফাইল ছবি

সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এককভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি জানান, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও পুলিশ আন্তরিকভাবে সহযোগিতা না করলে নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতাও সীমিত হয়ে পড়বে। সিইসি জানান, এ পর্যন্ত যেসব নির্বাচন করেছেন, সেখানে সরকারের হস্তক্ষেপ ছিল না। সোমবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন।

এর আগে সিইসি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এ আলোচনা হয়েছে বলেও জানান সিইসি। বৈঠকে আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হাওয়ার আশঙ্কার কথা জানায় জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদল। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার বাজে ব্যবহার ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ করে তা তদন্তের দাবি জানিয়েছে দলটি। সিটি নির্বাচনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেন তারা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু ছাড়াও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন ভূইয়া ও দপ্তর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে সিইসির সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ও ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।

পরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এটা একটা গ্রাউন্ড রিয়ালিটি যে, সরকারের যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এককভাবে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন। আমরা স্বীকার করেছি এবং আমরাও কথাটা জোর দিয়ে বলেছি যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেহেতু সরকার বিদ্যমান থাকবে, তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছাটা অবশ্যই প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এককভাবে কখনোই একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে না, যদি সংশ্লিষ্ট সবাই যেমন: প্রতিদ্বন্দ্বী দল, সরকারের প্রশাসন ও পুলিশ আন্তরিকভাবে সহযোগিতা না করে। এতে নির্বাচন কমিশনের যে দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা, তা সীমিত হয়ে পড়তে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা আসার পর যেসব নির্বাচন করেছি, সেখানে সরকারের তরফ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ আজ অবধি পাইনি। এখন দৃষ্টি জাতীয় নির্বাচনের দিকে। সেখানে যদি পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকাটা আমরা এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি, এ ধরনের যদি নিউট্রাল অবস্থানে ওনারা থাকেন, তাহলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচনটা অনেক ভালোভাবে করা সম্ভব হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে, আমরা তো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না! তিনি বলেন, আমাদের তরফ থেকে চেষ্টা থাকবে, সরকারের ওপর আমাদের তরফ থেকে যে চাপটা থাকবে, যদি সরকার...নির্বাচনটা যদি প্রভাবিত হয়ে যায় ব্যাপকভাবে এবং সেই তথ্য যদি আমাদের কাছে এসে পড়ে মিডিয়ার মাধ্যমে, পারসোনাল ফেসবুকে নয়, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করব। আমরা ঐকমত্য হয়েছি যে, নেগেটিভ যে আচরণ, ওর ওপর ভিত্তি করে কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। এটা আমরা আশ্বস্ত করতে পারি।

সিইসি বলেন, আমরা আশাবাদী সরকারের সদিচ্ছা থাকবে। জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে বলেছি, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আপনাদের করতে হবে। আপনারা যদি ভালোভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে কেন্দ্রে কেন্দ্রে যদি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলেও কিন্তু নির্বাচনের শুদ্ধতা বিঘ্নিত হতে পারে।

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিষয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইভিএমে সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না, এতে ওনারা খুশি। ওনারা আবারও বলতে চাচ্ছিলেন ইভিএমে অনেক কিছু আছে, ফাঁকিঝুঁকি প্রভৃতি আছে। আমরা সেটা মেনে নিইনি। আমরা একটা ইয়েতে বলেছিলাম, যাক তাহলে তো ২০১৮ সালের নির্বাচনে আলহামদুলিল্লাহ কোনো রকম অনিয়ম হয়নি! কারণ সেটা ইভিএমে হয়নি, সেটা ব্যালটে হয়েছিল। এটা আমরাও বিশ্বাস করি, ব্যালটে নির্বাচন হলে কোনো রকম অনিয়ম হবে না। যেমন ২০১৮ সালেও হয়নি, আগামী দিনেও ইনশাল্লাহ হবে না।

বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে সিইসি আরও বলেন, ওনারা বিভিন্ন বাস্তব চিত্রের কথা বলেছেন। আমাদের নির্বাচনি সংস্কৃতি, ফিল্ড লেভেলে যে ফ্যাকটরগুলো ওয়ার্ক করে, সেই সময় সেগুলোর কথা ওনারা বলেছেন। পুলিশের ভূমিকার কথাও বলেছেন। আমাদের স্পষ্টভাবে বলেছেন, পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কারণ সরকারের নির্দেশে পুলিশ এটা করে না। স্থানীয়ভাবে যে নির্বাচনগুলো হয়, সেখানে কিন্তু পুলিশকে পক্ষাশ্রিত করার জন্য প্রার্থীরাই চেষ্টা করে থাকেন। সেখানে কীভাবে পুলিশকে নিউট্রিলাইজড করা যায়, সেজন্য ওনারা আমাদের সহায়তা চেয়েছেন। আমরা বলেছি আমরা চেষ্টা করব এবং সরকারের সদিচ্ছার ওপর আমরা বারবার জোর দেব, সেটা সরকারকেও করতে হবে, আমরা জিনিসটা ভেবেচিন্তে পরে দেখব।

নির্বাচনি আইন প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সেদিনও সভায় বলেছি, মিডিয়াকর্মী যারা যাবেন তাদের কোনো রকম বাধা দেবেন না। তাদের ভেতরে যাওয়ার অধিকার আছে এবং স্বচ্ছতার বিষয়ে তথ্য আমরা কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে পাব না, স্বচ্ছতার বিষয়ে তথ্য আমরা মিডিয়ার কাছ থেকে পাব। আমি স্পষ্ট করে এই কথা গাজীপুরে পুলিশ-প্রশাসনের উদ্দেশে বলেছি। আমরা বলেছি, স্বচ্ছতার সার্টিফিকেট আমি পুলিশ থেকে নেব না, প্রশাসন থেকে নেব না, মিডিয়া থেকে নেব। আমাদের সহযোগিতা থাকবে, এটা নিয়ে কিছু মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। পরে আরও ব্যাখ্যা করা হবে। আমরা এটাকে চূড়ান্ত বলিনি। ওটার ব্যাপারে প্রয়োজনে আলোচনা আমরা পরে করব। আমরা মিডিয়ার ভূমিকা খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, অসংখ্য আচরণবিধি লঙ্ঘন হতে পারে। আমি বলেছি, সবকিছুই আমলে নেওয়ার মতো হয় না। কারণ আমি লোম বাছতে গিয়ে যদি কম্বল উজার করে ফেলি, সেটা খুব বাস্তবসম্মত হবে না।

আমি বলেছি, অ্যাট এন্ড অব দ্য ডে, মানুষ যেটা জানতে চাইবে নির্বাচনটা কেমন হলো। ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কয়টা আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে, কে কে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন আজও করে না, তখনও করেনি।

জাতীয় পার্টির ব্রিফিং : বৈঠকের পর মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে একটা টিম এসেছিলাম। পাঁচ সিটি ভোটে জাতীয় পার্টি কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল। সেগুলো সুরাহা করার জন্য এসেছি। গাইবান্ধার ভোট নিয়ে কিছু কথা ছিল, সেগুলোও বলার জন্য এসেছিলাম। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকে। স্থানীয় সরকারের গত নির্বাচনে বিশেষ করে গত ইউপি নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম, সেখানে শাসক দলের প্রার্থীরা অনেক জায়গায় আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে, জোর-জবরদস্তি করেছে। সেই সময় যারা নির্বাচন কমিশনে ছিলেন, তারা তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি।

তিনি বলেন, এমনকি গাইবান্ধার উপনির্বাচনের সময় আমাদের প্রার্থী ছিল শক্তিশালী এবং একটা পর্যায়ে নির্বাচনটা বাতিল করা হয়েছিল। বাতিল করার পর ইসি থেকে তদন্ত করা হলো। কারচুপি কারা করেছিল, বিশেষ করে ইভিএমে কারা কারা সহায়তা করে নির্বাচনটা প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল, এগুলো নিয়ে তদন্তের পর রিপোর্টও হয়। যারা অনিয়মে জড়িত ছিল, তাদের বিষয়ে জানতে পেরেছি। কিন্তু যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিষয়টি আজও জানতে পারিনি। এটা কমিশনকে আজ আমরা বলেছি, শাস্তিমূলক বিষয়গুলো যদি দৃশ্যমান না হয়, জনগণ যদি জানতে না পারে তাহলে তো আস্থাটা আসবে না। সিইসি আমাদের বলেছেন, আইন অনুযায়ী যারা জড়িত, তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব আরও বলেন, ভোটের সময় ইসির কথা না শুনলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে না গিয়ে নিজেরাই যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, সেই আইনের জন্য বারবার বলেছি। সেই আইনটা করলে ইসিই ব্যবস্থা নিতে পারত। তিনি বলেন, পাঁচ সিটি ভোটে নির্বাচনে আচরণবিধি মানা হচ্ছে না। সিলেটে একজন প্রার্থী রাস্তা দখল করে মঞ্চ বানিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম