গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়ার কারণ জানালেন ভিপি নূর
ক্ষমতায় যাওয়ার এত তাড়া নেই
শেখ মামুনুর রশীদ
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভিপি নূর। ফাইল ছবি
দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী চান না বলেই গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গেছেন বলে দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর। তিনি বলেছেন, গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার কাজটাকেই আমরা এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। গণতন্ত্র মঞ্চে থেকে এটা সম্ভব নয়। আমরা ছয়টি দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। আরও বৃহত্তর পরিসরে কাজ করতে চাই। সেই কাজ করার সুযোগও আমাদের রয়েছে।
আমরা মনে করি গণতন্ত্র মঞ্চে থাকায় আমাদের পরিধি ছোট হয়ে আসছিল। কাজ করার ক্ষমতাও সীমিত হয়ে আসছিল। নিজেদের কাজের পরিধি বাড়াতেই, কিংবা বলা যেতে পারে আরও বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার লক্ষ্য নিয়েই আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ ছেড়েছি। বুধবার যুগান্তরকে নুরুল হক নূর এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের বর্তমান রাজনীতিবিদরা বেশিরভাগই বৃদ্ধ, বয়োজ্যেষ্ঠ এবং প্রবীণ। তাদের সবকিছুতেই তাড়াহুড়া বেশি। আমরা প্রবীণ না, আমরা বয়সে তরুণ। আমাদের দলের বেশিরভাগ সদস্য তরুণ ও নবীন। আমাদের হাতে এখনো অনেক সময় আছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমাদের এত তাড়াহুড়া নেই। সবে মাত্র রাজনীতির মাঠে পা দিয়েছি। আজই সব পেতে হবে, আজই ক্ষমতায় যেতে হবে, মন্ত্রী-এমপি হতে হবে-এমন ভাবনা আমাদের মাথায় নেই। আমরা আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। নিজের পায়ে জোর না থাকলে অন্যের পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়ানো যায় না। বেশিদূর আগানোও যায় না। অনেক দল আছে, সেই দলের নেতাও অনেক বড়, কিন্তু তাদের সাংগঠনিক শক্তি নেই। আমরা দল গোছাতে কাজ করছি। নিজেরা শক্তিশালী হতে চেষ্টা করছি।
গত বছরের ৮ আগস্ট সাতটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠিত হয়। ৩০ ডিসেম্বর থেকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এসব কর্মসূচি এবং নেতৃত্বের বিরোধে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মনোমালিন্য নিয়ে বেশকিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। জোটে ভাঙনের শঙ্কাও ছিল। গণঅধিকার পরিষদের বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সেই শঙ্কা সত্যি হলো।
গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়াকে সামনে রেখে নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর গণঅধিকার পরিষদ নামে নতুন এই রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। ‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার’ স্লোগানকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করা গণঅধিকার পরিষদের মূলনীতি ঠিক করা হয়েছে চারটি। এরমধ্যে আছে-গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ। রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই নানা কারণে আলোচনায় রয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। ইতোমধ্যে দলটি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। নির্বাচন কমিশনের বিবেচনায় (ইসি) প্রাথমিকভাবে যে ১২টি রাজনৈতিক দল যোগ্য প্রমাণিত হয়েছে, তাদের মধ্যে গণঅধিকার পরিষদও রয়েছে।
কারও কারও মতে, নিবন্ধন পাওয়া, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ আরও বেশকিছু ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার অংশ হিসাবেই গণতন্ত্র মঞ্চ ছেড়েছে গণঅধিকার পরিষদ। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নুরুল হক নূর। তিনি বলেন, এটি একদমই অবাস্তব এবং ভ্রান্ত ধারণা। হিংসা-বিদ্বেষ থেকে আমাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে আমাদের জন্ম ও উত্থান। রাজপথে আমরা যতটা আক্রান্ত হয়েছি এতটা আর কেউ হয়নি। তাই পর্দার আড়ালে সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ কিংবা সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রশ্নই ওঠে না।
নুরুল হক নূর বলেন, সরকারের হস্তক্ষেপ না থাকলে এবং নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে যদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে তাহলে রাজনৈতিক দল হিসাবে গণঅধিকার পরিষদের নিবন্ধন হওয়ার কথা। নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুযায়ী একজন সাবেক সংসদ-সদস্য আমাদের দলে রয়েছেন। শর্ত অনুযায়ী একশ উপজেলায় কমিটি থাকার কথা, আমাদের রয়েছে তিনশ উপজেলায় সাংগঠনিক কমিটি। একইভাবে শর্ত অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশ জেলায় কমিটি থাকার কথা। আমাদের আছে ৫৫টি জেলায় কমিটি। তিনি বলেন, নিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দলের চাইতে আমাদের সাংগঠনিক শক্তি, সক্ষমতা ও ভিত্তি শক্তিশালী।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক নূর বলেন, আমরা বিএনপিসহ বিরোধী দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছি, থাকব। আমাদের দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। দলীয় সরকারের অধীনে সাজানো, পাতানো এবং বিতর্কিত নির্বাচনে যাব না। তবে ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি আমরা। প্রার্থী দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হবে না। যদিও এ দেশের মানুষ প্রতীক দেখে ভোট দিতে অভ্যস্ত। তারা এখনো এতটা সচেতন নন। তবুও আমরা চেষ্টা করব আমাদের মতো করে জনগণের কাছে পৌঁছাতে। আমরা যে রাজনীতিতে ফ্যাক্টর-এটা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।