Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আ.লীগ

বিএনপিকে রাজপথেই মোকাবিলার প্রস্তুতি

থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি * শরিক দল ও সমমনাদেরও কাজে লাগানো হবে

Icon

হাসিবুল হাসান

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপিকে রাজপথেই মোকাবিলার প্রস্তুতি

বিএনপির এক দফা আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে ‘ভীত নয়’ বললেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী পক্ষের আন্দোলন মোকাবিলায় নিচ্ছে নানা প্রস্তুতি।

পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে থাকার কথা ভাবছে ক্ষমতাসীনরা। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, আন্দোলনে বাধা দেবেন না। আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবেন।

ক্ষমতাসীন দল হিসাবে তারা চান পরিস্থিতি যেন অস্থিতিশীল না হয়। আন্দোলনের নামে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা হলে তা প্রতিহত করা হবে।

সহিংস আন্দোলনের পথে হাঁটলে বিএনপিকে প্রতিহতের প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে নির্বাচন পর্যন্ত নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সরব থাকবে দল ও সহযোগী সংগঠন। শরিক দল ও সমমনাদেরও কাজে লাগাতে চায় তারা। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি। আড়ালে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটানোর কোনো পরিকল্পনাও যেন নিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে তারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি। তারা যখন এক দফা নিয়ে নামবে আমরা রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবিলা করব। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে। আমরা চেষ্টা করব পরিস্থিতি সব সময় স্বাভাবিক রাখতে। এখন যেমন তাদের আন্দোলন কিন্তু রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে না। সরকার জনগণের জানমাল রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আওয়ামী লীগও ক্ষমতাসীন দল হিসাবে জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কিন্তু এক দফা আন্দোলন বা আন্দোলনের নামে যদি পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হয়, সেটা তো মানা হবে না।

তারা যদি ভাবে খালি মাঠে একতরফা গোল দিয়ে দেবে, এটা ভুল ভাবা হবে। কারণ আমরা তাদের রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করব। আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেউ বসে থাকবে না।

একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এটা তাদের (বিএনপির) দলের বিষয়। বহুদিন ধরে শুনছি তারা আন্দোলন জোরদার করছে। আমরাও চাই-একটা শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক শুভ শক্তি উত্থান হোক। কিন্তু কোনো অশুভ কর্মকাণ্ড বা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কেউ যেন তৈরি না করে সেই আহ্বানও আমরা করব। আর যদি কেউ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির কথার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। তাদের আন্দোলনটাও তেমনি। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা আসলে ধূম্রজাল তৈরির অপচেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের রাজনৈতিক দল। জনগণই আমাদের প্রাণভোমরা। আমরা চাই জনগণের শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকুক।

এটা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সব সময় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে, করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। আমরা কাউকে জ্বালাও-পোড়াও বা জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে দেব না। কেউ এই অপচেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই তাদের প্রতিহত করা হবে।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের শেষের দিক থেকে টানা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি দলটির।

এ দাবিতে বিভাগীয় পর্যায়ের শেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ করে তারা। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে গণমিছিল, সমাবেশ, পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে বিএনপি।

সবশেষ ১ মে রাজধানীতে শ্রমিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে বড় শোডাউন দেখিয়েছে দলটি। তবে এসব কর্মসূচিতে বিএনপিকে ফাঁকা মাঠে ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। তাদের সব কর্মসূচির দিনই নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল ক্ষমতাসীনরাও।

আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি-এগুলো তাদের পালটাপালটি কর্মসূচি নয়। আন্দোলন বা কর্মসূচির নামে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেজন্য সতর্ক পাহারায় থাকেন তারা। ক্ষমতাসীন দল হিসাবে আওয়ামী লীগ চায় না দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। ফলে বিএনপির কর্মসূচিস্থল থেকে দূরে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে বা কারও উসকানিতে পা না দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। এ কারণেই কর্মসূচি ঘিরে বড় দুই রাজনৈদিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সেভাবে মুখোমুখি হতে দেখা যায়নি। বড় কোনো সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সামনের দিনের আন্দোলনেও বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি চায় বিএনপি নির্বাচনি মাঠে থাকুক। সে কারণেই কর্মসূচিতে সরাসরি বাধা দেবে না। আবার বাধা না দিলেও একেবারে ফাঁকা মাঠও ছাড়া হবে না। বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে নিয়মিত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন দল ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সারা দেশে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিগুলোর আয়োজনে হবে শান্তি সমাবেশ, মানববন্ধন, আলোচনা সভাসহ অহিংস কর্মসূচি।

নির্বাচন পর্যন্ত এসব কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি বিএনপিকে আন্দোলনের সুযোগ দিলেও বিশৃঙ্খলায় ছাড় দেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকবে। আড়ালে নাশকতা ও সন্ত্রাস ঘটানোর কোনো পরিকল্পনাও যেন না নিতে পারে সে বিষয়ে বাড়ানো হবে গোয়েন্দা নজরদারি। তারা কোনো ধরনের সহিংসতা করলে প্রশাসনকে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের পাশাপাশি শরিক ও সমমনা শক্তিগুলোকেও মাঠে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির এ ধরনের আন্দোলনের হুমকি বহুবার দিয়েছে। এতে আমরা ভীত নই। আওয়ামী লীগ জানে আন্দোলন কত প্রকার ও কী কী। তবে আমরা প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করি না, প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করি। আমরা সহিংসতায় বিশ্বাস করি না, শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা তাদের (বিএনপির) সব অপরাজনীতি অশুভ রাজনীতি শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।

জানা গেছে, তিন মেয়াদে টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনেও জয় পেতে আগেভাগেই মাঠ গোছানো শুরু করেছে দলটি। এত লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকায় তৃণমূলে বেড়েছে দ্বন্দ্ব। তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নিরসনে এবার সরাসরি পদক্ষেপ নিচ্ছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে জেলা, উপজেলা ও মহানগরের নেতাদের গণভবনে ডেকে কথা বলছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় জনসভা করেছেন। এছাড়া দলীয় প্রার্থী বাছাই, জোটের মেরু মেলানো, ইশতেহার তৈরি, সংগ্রহসহ অন্যান্য কাজও শুরু করেছে দলটি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম