র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু: সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি
আমিরুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
নওগাঁ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সুলতানা জেসমিন মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের (সমন্বয় ও সংস্কার) নেতৃত্বে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার এ কমিটি গঠন করা হয়। খবর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের।
এর আগে গত ৫ এপ্রিল সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় জুডিশিয়াল ইনকুয়ারি চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক।
ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কমিটিতে নওগাঁর জেলা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকেও অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়।
জানা গেছে, আদালতের ওই আদেশের কপি পাওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মঙ্গলবার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করল। তবে ভূমি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কোনো প্রতিনিধি নেওয়া হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খানকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।
এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক কমিটিতে নওগাঁর জেলা ও দায়রা জজ এবং নওগাঁর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একজন করে দুজন প্রতিনিধি, নওগাঁর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও নওগাঁর সিভিল সার্জনকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। পুরো ঘটনা তদন্তে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে কমিটিকে আগামী দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশের সার্টিফায়েড কপি হাতে পাওয়ার পর আদালতের নির্দেশের আলোকে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই কমিটি কার্যক্রম শুরু করবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১৬ এপ্রিল উচ্চ আদালত থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে তদন্ত কমিটি গঠনে আদালতের আদেশের কপি পাঠানো হয়। ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তা পৌঁছায়। এরপর এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বৈঠকও হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২৫ এপ্রিল কমিটি গঠনের ফাইল উপস্থাপন করা হয়। সবকিছু বিশ্লেষণ করে মঙ্গলবার কমিটি গঠন করা হয়।
র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর পর সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সিনিয়র সচিব জননিরাপত্তা বিভাগ, পুলিশ মহাপরিদর্শক, মহাপরিচালক র্যাব, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্চের ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার রাজশাহী মহানগরী, পুলিশ সুপার নওগাঁ, অধিনায়ক র্যাব রাজশাহী, কোম্পানি কমান্ডার র্যাব-৫ এবং নওগাঁ মডেল থানার ওসিকে বিবাদী করে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত।
কমিটিকে নির্মোহভাবে ঘটনার ধারাবাহিকতায় অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে আদালতের আদেশে। ঘটনার মূলে গিয়ে কার কতটুকু সম্পৃক্ততা রয়েছে তাও বিশ্লেষণ করতে বলা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির মুখোমুখি করা হবে যুগ্মসচিব এনামুল হককে। তার অভিযোগের কারণেই র্যাব গত ২২ মার্চ সকালে শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে তুলে নেয়।
এর সঙ্গে র্যাবের যে ১১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে কমিটি। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশমতো, জেসমিনের মৃত্যর পরদিন তার নামে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কীভাবে মামলা রেকর্ড হলো তার তথ্যও নেবে।
প্রতারণার অভিযোগে জেসমিনসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্মসচিব) এনামুল হক।
জানা গেছে, জেসমিনের মৃত্যু ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের তরফ থেকে থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হলেও তাতে শুধু এনামুল হকের বক্তব্য ছিল।
জেসমিন মৃত্যুর ঘটনা বহুপাক্ষিক হওয়ায় বিভাগীয় কমিশনারের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর র্ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. ইমতিয়াজ হোসেনকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করে আরেকটি কমিটি করা হয়। তবে ওই কমিটির তদন্তের আগেই উচ্চ আদালত থেকে বিষয়টি তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
র্যাব হেফাজতে আটক ও সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর একদিন পর (২৩ মার্চ) তার বিরুদ্ধে যুগ্মসচিব মো. এনামুল হক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে মামলা করেছিলেন তার অপর আসামি আল আমিনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। চাঁদপুরের হাইমচরের আল আমিনের বিষয়ে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সে একজন পেশাদার হ্যাকার।
কিন্তু র্যাবের হাতে ঢাকায় গ্রেফতার হওয়া আল আমিনের নতুন পরিচয় জানিয়েছে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানা পুলিশ। পুলিশ বলছে, আল আমিন মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের একজন এজেন্ট। থানা পুলিশের কাছে সর্বশেষ এমন তথ্যই রয়েছে। শাহজাহানপুর থানায় আল আমিনের নামে আগে কোনো মামলা ছিল না।