Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর ৩ দেশ সফর

রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টেকসই করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে উদ্বেগ রয়েছে; গ্রাউন্ড রিয়ালিটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের উদ্বেগ জানাতেই থাকবে -এম হুমায়ুন কবির

Icon

মাসুদ করিম

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দেশ সফর শুধু কূটনৈতিক নয়; বরং রাজনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচনের আগে সফরে রাজনীতির দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড না থাকলেও একটা বাতাবরণ লক্ষণীয়।

জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে অপ্রকাশ্য রাজনীতির বার্তা কী তা জানার কৌতূহল প্রবল। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রধানমন্ত্রীর সফরে রাজনীতির আবহে সারবত্তার চেয়ে দৃষ্টিভঙ্গির বেশি প্রকাশ লক্ষ্য করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে জাপান সফর শেষ করেছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপনের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে সফরে গেছেন। তার সফরের শেষ দিকে নতুন ব্রিটিশ রাজার রাজ্যভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন।

৯ মে সফর শেষে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব সফরের মধ্যে শুধু জাপানেই ছিল দ্বিপক্ষীয় সফর। জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত হয়েছে।

নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দেশ সফরের রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে কিনা জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, যে কোনো উচ্চপর্যায়ের সফরেই অতিরিক্ত রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকতেই পারে। তবে জাপান সফরটা অনেক দিন ধরেই আলোচনায় ছিল। এটা পেছাতে পেছাতে এখন হলো। ওয়াশিংটন সফর দ্বিপক্ষীয় নয়। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৫০ বছর সহযোগিতার উদ্যাপন। এমন অনুষ্ঠানে সরকারের উচ্চপর্যায়ের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ঘোষণা করেছে যে, এক দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার সমর্থন দেবে। ব্রিটিশ রাজার রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠানে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগাযোগ হতে পারে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে বন্ধু দেশগুলোর সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। যা নিশ্চয় অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা। এসবে একটা দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ থাকলেও সারবত্তা তেমন নেই।

জাপানের সঙ্গে কৌশলগত অংশাদারত্বের কারণে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপানের সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করেছে। সামরিক ক্রয়কে বহুমুখী করার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা চলছে। জাপান এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।

প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জাপানের উৎকর্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এটা নিয়ে চীনের সঙ্গে সংঘাতের খুব বেশি আশঙ্কা নেই। কারণ বাংলাদেশে চীনের স্বার্থ রয়েছে। এখন জাপানের স্বার্থের কারণে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে নেতিবাচক প্রক্রিয়ায় জড়াবে এটা মনে হয় না। তবে ইউক্রেন ইস্যু এবং ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে জাপানের ফর্মুলার সঙ্গে বাংলাদেশ সহমত প্রকাশ করায় এ ব্যাপারে চীন প্রশ্ন করতে পারে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে আমরা সাধারণভাবে স্যাংশন দিয়ে বুঝি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এভাবে দেখে না। তারা অনেক উপাদান সাজিয়ে দেখে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টেকসই করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে উদ্বেগ রয়েছে; সেটা কোনো একটা সফরের মাধ্যমে দূর হবে না। গ্রাউন্ড রিয়ালিটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের উদ্বেগ জানাতেই থাকবে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে থাকবে। কারণ বিষয়টাকে তারা বড় ক্যানভাসে দেখে। আমাদের মতো সাদাকালোয় দেখে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের রাজনৈতিক তাৎপর্য অবশ্যই আছে। সরকারপ্রধানের সঙ্গে রাজনীতি ও কূটনীতি দুটোই একসঙ্গে চলে। তবে জাপান, বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকা অবশ্যই ইতিবাচক। রাজনীতি ও কূটনীতিকে আলাদা করা যায় না। আমরা যতই বলি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা ঠিক না। কিন্তু নির্বাচনি বছরে বিভিন্ন দেশ পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে দেখছে।

জাপানের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চীনের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যতই বলি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব; কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়-বাস্তবে ভারসাম্যের মধ্যে থেকেও কোনো না কোনো চয়েস নিতে হচ্ছে। সোনাদিয়ায় চীন গভীর সমুদ্রবন্দর করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশ দেয়নি। জাপানকে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর করতে দিয়েছে।

তবুও চীন কর্ণফুলী টানেল করেছে। পদ্মা সেতুতে কাজ পেয়েছে। চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের রক্ষাকবচ হলো, আমরা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সংক্ষেপে বিআরআইতে আছি। আমরা নিজেদের উন্নয়নের জন্যে জাপানের সঙ্গে গেছি। আমরা তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হচ্ছি না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম