Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ

ভোটার উপস্থিতি কম কমিশনকে দুষলেন দুই প্রার্থী

Icon

মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভোটার উপস্থিতি কম কমিশনকে দুষলেন দুই প্রার্থী

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এত কমসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ। ৫ লাখ ১৭ হাজার ৯৫২ ভোটারের আসনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ৬৭ হাজার ২০৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের স উ ম আবদুস সামাদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৭ ভোট।

পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে নোমান ছাড়া বাকি চারজনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এ আসনে গত উপনির্বাচনে প্রায় ২৩ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদ। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ায় দ্বিতীয় দফা উপিনির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।

এবারের উপনির্বাচনে কেন এত কম ভোট পড়ল, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। প্রার্থীদের দুজন এজন্য দুষছেন নির্বাচন কমিশনকে। তাদের অভিযোগ, কমিশন ভোটারদের আস্থা ফেরাতে পারেনি। ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়েছে আসনটিতে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগেই প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি উঠেছিল। যা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকা এবং ভোটকেন্দ্রের সামনে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মহড়া দেওয়াসহ নানা কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ চারটি রাজনৈতিক দলের চারজন এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নেন। বিএনপি এতে অংশ নেয়নি। প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা প্রার্থী যথাক্রমে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের স উ ম আবদুস সামাদ এবং ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নির্বাচন শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী স উ ম আবদুস সামাদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন অযোগ্য ও মেরুদণ্ডহীন। এই নির্বাচন কমিশন যে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে না তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম সরকার সহযোগিতা করবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে তার থেকে উত্তরণ ঘটাতে। কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর দাবি জানিয়েছিলাম, যাতে ভোটকেন্দ্রে বুথে ভূতের আসর না লাগে। আমাদের নেতাকর্মী ও এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারি দলের প্রার্থীর লোকজন নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়েছে। ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে না আসে সেজন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। মূলত এসব কারণেই ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল অস্বাভাবিক কম।’

তিনি এ-ও দাবি করেন, উপনির্বাচনে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত চেয়ার প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন নির্বাচন-পরবর্তী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি মোটেও আশাব্যঞ্জক ছিল না। যার অশুভ প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়লে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল হিসাবে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ পূর্ব থেকে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী করার বিষয়ে বরাবরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে এসেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটারদের যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন কমিশনের উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান হয়নি। যে কারণে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হয়নি বলে আমরা মনে করি। এ উপনির্বাচনে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতা না থাকলেও কেন্দ্রের বাইরে একটি দলের কর্মীদের অবাঞ্ছিত মহড়া ছিল লক্ষণীয়। যাতে ভোটারদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।’

নির্বাচন কমিশন ভোটারদের আস্থা ফেরাতে পারেনি, এমন অভিযোগ মানতে নারাজ রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান।

তিনি শুক্রবার এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরা নির্বাচন কমিশনের বিষয় বা প্রার্থীদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়। এটা রিটার্নিং অফিসারের কোনো বিষয় নয়। কেন্দ্রে ঢুকে কোনো অযাচিত লোক যেন ভোটে টিপ দিতে না পারে রিটার্নিং অফিসার হিসাবে আমি সেটা নিশ্চিত করেছি। কেন্দ্রের ভেতরে একজনের ভোট অন্যজন দিয়েছে, এ রকম কোনো ঘটনার কথা কেউ বলতে পারেনি। এ ব্যাপারে প্রার্থীদেরও কোনো অভিযোগ নেই। কেন্দ্রের ভেতরটা আমি নিরাপদ করেছি। সিসিটিভি ক্যামেরা দিলে যে কাজটা হতো, সেটা তো আমি নিশ্চিত করেছি। নির্বাচন কমিশন আস্থা ফেরাতে পেরেছে। প্রার্থীরা যখন যা চেয়েছেন, আমরা তা করেছি।’

এরপরও ভোটার উপস্থিতি কেন কম হলো-জানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার বলেন, ‘রোজার মাসে প্রচার-প্রচারণা করতে হয়েছে। তাই প্রার্থীরা হয়তো আশানুরূপ প্রচারণা চালাতে পারেননি। দ্বিতীয় কারণ হলো-ঈদুল ফিতরের ছুটি ছিল। বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গেছেন। যার কারণে হয়তো উপস্থিতি কম ছিল। এছাড়া একই আসনে একাধিকবার উপনির্বাচন হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে উপস্থিতি কম হয়েছে।’

জামানত হারালেন ৪ প্রার্থী : চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চারজনই জামানত হারিয়েছেন। নিয়মানুযায়ী মোট বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগ পেতে হয়। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়া অন্য চার প্রার্থী সেই শর্ত পূরণ করতে পারেননি। উপনির্বাচনে বৈধ ভোট পড়েছে ৭৫ হাজার ৩০৫টি।

জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন-ইসলামী ফ্রন্টের স উ ম আবদুস সামাদ (৫ হাজার ৮৭ ভোট) ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের এসএম ফরিদ উদ্দীন (১ হাজার ৮৬০ ভোট) ন্যাশনাল পিপলস পার্টির কামাল পাশা (৬৭৩ ভোট) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রমজান আলী (৪৮০ ভোট)। বিধি অনুযায়ী এই চার প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান।

সরকারের প্রতি মানুষের আস্থার প্রতিফলন : নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা ও ভরসার প্রতিফলন ঘটেছে। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, উত্তর জেলা সভাপতি এমএ সালাম, দক্ষিণ জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান এক যুক্ত বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন।

তারা বলেন, তীব্র দাবদাহ ও বিরূপ প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে যেসব ভোটার ভোটকেন্দ্রে এসে নৌকা প্রতীকের পক্ষে রায় প্রদান করেছেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং ইস্যু। কেননা যারা নির্বাচনকে ভয় পায় এবং জনগণের প্রতি আস্থা ও ভরসাহীন তারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক নজরদারির ফলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। এটা সবার জন্যই একটি সফল অর্জন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম