এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শেষ সময়ের প্রস্তুতি
ড. ব্রাদার লিও পেরেরা
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ৩০ এপ্রিল। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে দশ বছর পড়ালেখা করে এই পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করেছ।
তার ওপর, গত দুই বছরব্যাপী নবম ও দশম শ্রেণি, এই মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার জন্য নিবিড়ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছ। তোমাদের গত দশ বছরের শিক্ষা জীবনের প্রায় তিন বছর কোভিড-১৯ বিভিন্নভাবে বিঘিœত ও প্রভাবিত করেছে এবং তাও বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের সহায়তায় গত এক বছরে বিষয়বস্তু ও মানসিক চাপগুলো কাটিয়ে উঠেছে। সর্বোপরি আমি বিশ্বাস করি, তোমরা জীবনের একটা প্রধান পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। এই পরীক্ষাকে সামনে রেখে আগামী দিনগুলোর জন্য তোমাদের করণীয় বিষয়েু পরামর্শমূলক কিছু দিকনির্দেশনা-
শারীরিক, মানসিক ও আবেগিক স্বাস্থ্য : সবসময় সবাই সুস্থ থাকতে চায়। বিশেষত শিক্ষার্থীদের এই পরীক্ষা চলাকালীন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও চাপমুক্ত থাকা খুবই জরুরি। প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুম ও মানসিক বিশ্রাম প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় ও পরিমিত পরিমাণ বিশ্রাম, সুষম খাদ্য ও পরিকল্পিত কার্যক্রমের সূচি ও সীমিত পরিমাণ ব্যায়াম ও যোগ ব্যায়াম, পারস্পরিক সুসম্পর্ক শারীরিক, মানসিক ও আবেগিকভাবে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে।
পাঠ্যসূচি ও পড়ালেখা : তোমরা সবাই গত দুই বছরে পাঠ্যবই একাধিকবার পড়েছ ও বিষয়গুলোর পরীক্ষাও দিয়েছ। আগামী দিনগুলোতে পরিকল্পিতভাবে শুধু কঠিন ও মৌলিক বিষয়গুলো, অস্পষ্ট ও দ্বিধার বিষয়গুলো পুনরায় পড়বে। অতিরিক্ত পড়ালেখা ও দুশ্চিন্তা করে মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে না। পাঠ্যবিষয়গুলোর ওপর সম্যক, স্পষ্ট ও সঠিক তথ্য ও ধারণা রাখবে-যেন যে কোনো সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তর নিজে লিখতে পার।
পরীক্ষা, পরীক্ষার হল ও প্রয়োজীনয় সামগ্রী : পরীক্ষার সময়, দূরত্ব, ট্রাফিক সমস্যা ও আবহাওয়া বিবেচনা করে যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হও, যেন ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পার। শুধু পরীক্ষায় ব্যবহার্য যাবতীয় জিনিসপত্র-যেমন প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড, কলম, পেনসিল, রাবার, মার্কার, জ্যামিতি বক্স ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে যাবে। স্মার্টফোন ও ওয়াচ এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষার হলে নেওয়া নিষিদ্ধ।
পরীক্ষার হলে ধীরস্থির ও শান্তভাবে কিছুক্ষণ বসে মনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আস-যেন সব বিষয় তুমি ধীরে ধীরে মনে করতে পার। পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়ার পর ধীরস্থিরভাবে প্রশ্নগুলো মনোযোগ দিয়ে পড় এবং যে প্রশ্নগুলোর উত্তর তুমি সবচেয়ে ভালো পার, সেগুলোর উত্তর লিখ। সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৫ মিনিট আগে উত্তর লেখা শেষ কর এবং লিখিত উত্তরগুলো ভালোভাবে পড় যেন উত্তরে কোনো ভুল না থাকে। বিষয় বিবেচনা করে কোন প্রশ্নের জন্য কতটুকু সময় লিখবে তা প্রথমেই ঠিক করে নাও। বহু নির্বাচনি অভীক্ষার উত্তরপত্রও দ্বিতীয়বার দেখে জমা দেবে।
উত্তরপত্রে তথ্যগুলো সুস্পষ্ট ও সঠিকভাবে লিখবে। ভুল তথ্য থাকলে তোমার উত্তরপত্র বাতিল বা ফল অপ্রকাশিত থাকতে পারে।
পরীক্ষার খাতায় হাতের লেখা, চিহ্ন ও ছবি সুন্দর, পরিষ্কার, স্পষ্ট ও গোছানো হতে হবে-যেন পরীক্ষকের পড়তে ও দেখতে ইচ্ছে করে। প্রশ্নের উত্তরগুলো প্রাসঙ্গিক, যৌক্তিক, পাঠ্যবইয়ের তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে। অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে উত্তর দীর্ঘায়িত করার প্রয়োজন নেই।
পরিশেষে বলতে চাই : জীবনের প্রত্যেকটি পরীক্ষা ও এর প্রাপ্তি তোমার জীবনে একটি করে মুকুট যুক্ত করে। প্রয়োজন মতো পড়, তোমার সেরাটাই দাও, পরীক্ষা ও উত্তর লেখা উপভোগ কর। তুমি নিশ্চয় জয়ী হবে। সব পরীক্ষার্থীর প্রতি শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইল।
লেখক : অধ্যক্ষ, সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর, ঢাকা