Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নিউ সুপার মার্কেট

ক্ষতিগ্রস্ত দোকান গোছাতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা

ওয়ারীতে ভবনে আগুন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ক্ষতিগ্রস্ত দোকান গোছাতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাদের দোকান কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা দোকান চালু করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ পিকআপে, কেউ ঠেলাগাড়িতে মালামাল এনে দোকান সাজাচ্ছেন।

আর যাদের দোকান পুরো পুড়ে গেছে তারা দোকান পরিষ্কারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সোমবার নিচতলার দোকানগুলো খুলে দেওয়া হলেও সেখানে তেমন ক্রেতা দেখা যায়নি। দোতলাও খুলে দেওয়া হবে জানা গেছে। এদিকে রাজধানীর ওয়ারীর ১৮/২ রাংকিং স্ট্রিট লেনের সাততলা একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ভবনের প্রথম দুইতলা বাণিজ্যিক এবং উপরের চারতলা আবাসিক। সোমবার রাত ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস ঘণ্টাখানেক চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

নিউ সুপার মার্কেটের দোকানিরা জানান, আগুনে মার্কেটের বিদ্যুৎ সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সব দোকান এখনো বিদ্যুৎহীন। এই গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতা কম আসছেন। জেনারেটর দিয়ে মার্কেটে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, মার্কেটটির নিচতলার বেশিরভাগ দোকানই খুলেছে। চলছে মালামাল আনা-নেওয়া, গোছানো ও দোকান পরিচ্ছন্নতার কাজ। অন্ধকারে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে তীব্র গরমে মালামাল সাজাচ্ছেন বিক্রেতারা। গরমে ঘেমে অনেককে মার্কেটের বাইরে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের পিকআপ ভ্যান, ঠেলাগাড়িতে করে মালামাল আনতে দেখা গেছে। তবে আশানুরূপ বিক্রি নেই।

এই মার্কেটসংলগ্ন ফুটপাতে জুতা, স্যান্ডেল, ঘড়ি, ব্যাগ, সানগ্লাস বিক্রি হয়। রোজার এই সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখর থাকে এই ফুটপাত। মঙ্গলবার এখানে কয়েকজন সানগ্লাস বিক্রেতাকে দেখা গেছে। তবে ক্রেতা ছিল খুব কম। সাজ্জাদ নামের একজন বিক্রেতা জানান, বিক্রি একেবারে কম।

মার্কেট জমলে ফুটপাত জমবে। মার্কেটের অবস্থা খারাপ। সব ময়লা ফুটপাতে ফেলা হয়েছে। সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার হয়নি। তাই কাস্টমার কম। নিউ সুপার মার্কেটের নিচতলায় বাঁধাই করা পেইন্টিং বিক্রি করেন রনি। তিনি বলেন, সোমবার সকালে দোকান খুলেছিলাম। তবে আসর নামজের পর বন্ধ করে দেই। কারণ অন্ধকারে কাস্টমার আসে না। ওইদিন কোনো বিক্রি হয়নি। আজ (মঙ্গলবার) একটা ছবি বিক্রি হয়েছে।

মার্কেটটির নিচতলায় ঢুকতেই চোখে পড়ে গেঞ্জি, হোসিয়ারি পণ্যের দোকান। অনি মনি সেন্টার নামের দোকানটির বিক্রয়কর্মী শিহাব বলেন, ‘আগুনে আমাদের পণ্যের কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ৪ দিন বিক্রি বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, রোজার শেষ ১০ দিনে বিক্রি বেশি হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতা আসছে না। তাই দোকান বিকালে বন্ধ করে দেই। আজকে (মঙ্গলবার) সামান্য বিক্রি হচ্ছে।’

এই মার্কেটের বাইরে জান্নাত ব্যাগ হাউজের বিক্রয়কর্মী ইব্রাহীম হোসেন জানান, দোকানে প্রতিদিন খরচ হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকার উপরে। অথচ ২ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারছি। আমাদের দোকান সুপার মার্কেটের বাইরে হওয়ায় শুধু আগুন লাগার দিন বন্ধ ছিল। ঈদের শেষ ১০ দিনে দৈনিক ১৫-২০ হাজার টাকা সেল হওয়ার কথা। কিন্তু আগুন আতঙ্কে ক্রেতারা আসছেন না। মার্কেটে বিদ্যুৎ না থাকা ও দোকান ভালোভাবে সাজানো না থাকায় ক্রেতার সংখ্যাও কম।

শনিবারের আগুনে এই মার্কেটের ১৩০০ দোকানের মধ্যে প্রায় ২৪৩টি পুড়ে গেছে। তৃতীয় তলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওয়ারীর আগুনের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের পর বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোমবার রাত দেড়টায় বিকট শব্দে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়। এরপর রাত পৌনে ২টায় বেবিশপের নিচ তলার ভেতর থেকে ধোঁয়া দেখা দেয়। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন স্থানীয়রা।

কিছুক্ষণ পরই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। প্রায় ৫০ মিনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুনের লেলিহান শিখা তীব্র হওয়ায় পর্যায়ক্রমে ১০টি ইউনিট পাঠায় ফায়ার সার্ভিস।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, আগুন লাগার পর উপরের তলার বাসিন্দারা আটকা পড়েন। বাঁচার আকুতি জানিয়ে তারা চিৎকার করছিলেন। পরে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা এসে তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসেন। আগুনের সংবাদে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের বাসা-বাড়ির লোকজন রাস্তায় নেমে আসায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে বেগ পেতে হয়। আর আগুন লাগার পরই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা নোলক মন্ডল জানান, ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ থেকেই আগুনের সূত্রপাত। পরে ভবনটির নিচ তলায় বেবিশপে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। উপরের তলার আবাসিক বাসিন্দারা দ্রুত নিচে নেমে আসেন। কেউ কেউ ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেন।

অগ্নিকাণ্ডের কারণে ওই ভবনের অনেক বাসিন্দা রাতে স্বজনদের বাসায় আশ্রয় নেন। মঙ্গলবার সকালে এসে তারা বাসায় ওঠেন। ফায়ার সার্ভিসের পানি ছিটানোর ফলে বাসার মালামাল ভিজে যায়। সকালে বেবিশপটি পরিষ্কার করছিলেন কর্মচারীরা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রথমে একটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়। তারপরই ওয়ারী পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ১৮/২ রাংকিং স্ট্রিট লেনের ভবনের বেবিশপে আগুন লাগে। ওই ভবনটি সাততলা। নিচে ও দোতলায় বেবিশপের শোরুম। তৃতীয় তলা থেকে ৭ তলা পর্যন্ত আবাসিক। তবে আগুনে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম