বঙ্গবাজার ট্র্যাজেডি
১৭ বর্গফুট জায়গায় চৌকি পেতে আজ থেকে বেচাকেনা
ইকবাল হাসান ফরিদ
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা চৌকি পেতে আজ থেকে খোলা আকাশের নিচে বেচাবিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। সব খোয়ানো ব্যবসায়ীদের জন্য এটা এক ধরনের সান্ত্বনা ব্যবস্থা। যেভাবে একেকজন ব্যবসায়ীর একাধিক দোকান ছিল, তারা মাত্র সাড়ে ১৭ বর্গফুট জায়গায় চৌকি বিছিয়ে বসতে পারবেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা মনে করেন ঈদ সামনে রেখে এই ব্যবস্থাটুকু তাদের জন্য সাময়িক স্বস্তির। কিন্তু তারা চান, ক্ষতপোড়া জায়গায় স্থায়ী ব্যবস্থা।
জানা গেছে, আজ দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস অস্থায়ী এ মার্কেট উদ্বোধন করবেন। মঙ্গলবার ব্যবসায়ী নেতা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা যুগান্তরকে জানান, মার্কেটস্থল পরিদর্শন শেষে কিভাবে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি হবে সে বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেবেন মেয়র। তার দিকনির্দেশনায় নেওয়া হবে পরবর্তী ব্যবস্থা।
ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্যবসায়ী যুগান্তরকে জানান, মার্কেট কমিটির নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী দোকান নিয়ে বসার জন্য তারা সাড়ে ৩ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থের চৌকি নিয়ে বসতে পারবেন। তবে ক্ষতিপূরণ হিসাবে তারা কি পাবেন তা এখনো তাদের কেউ জানাননি।
এদিকে ডিএসসিসির তদন্ত কমিটির সভাপতি ও অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজার ও আশপাশের মার্কেটের ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মেরীনা নাজনীন যুগান্তরকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি মার্কেটের ২ হাজার ৯৬১ জন, মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের ৭৯১ জন এবং বঙ্গ ইসলামীয়া ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটে ৯৩ জন ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, অস্থায়ী মার্কেট চালু করতে পোড়া মার্কেটের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা জায়গায় বসানো হচ্ছে ইট। উপরে দেওয়া হচ্ছে বালি। আশপাশের ধ্বংসস্তূপের ভিটি ভেঙে সমান করা হচ্ছে। বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আগুনে বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সের ৪টি ইউনিটে ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার ৯৬১ ব্যবসায়ীর তালিকা হস্তান্তর করেছি।
তবে ক্ষতিপূরণ কি দেওয়া হবে-তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের খোঁজ রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এরইমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসও আমাদের (ব্যবসায়ীদের) সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে সহায়তায় সর্বোচ্চটুকু করার আশ্বাস দিয়েছেন। অস্থায়ী মার্কেট চালুর পর হয়তো তারা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানিয়েছেন, বঙ্গবাজারের ১.৭৯ একর জায়গাজুড়ে ১৫০ গাড়ি বালি ফেলা হয়েছে। বিছানো হয়েছে আড়াই লাখ ইট। দক্ষিণ সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. হায়দর আলীর নেতৃত্বে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অগ্নিকাণ্ডস্থল থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১০৬০ টন বর্জ্য অপসারণের তথ্য জানায় ডিএসসিসি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাজমুল হুদা যুগান্তরকে বলেন, আমরা চাচ্ছি ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যবসায়ী যাতে এখানে বসতে পারেন। কেউ যাতে কোনোভাবে বঞ্চিত না হন। তিনি বলেন, এই কমপ্লেক্স তিনতলা ছিল। অনেকের একাধিক দোকান ছিল। সেইভাবে সমন্বয় করে প্রত্যেককে একটি করে দোকানের জায়গা দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার বঙ্গবাজারে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে কথা হয় সায়েম শেখ নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি জানান, তার দুটি দোকান ছিল। সব পুড়ে গেছে। অস্থায়ী দোকান পেলে পরিবার, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে টাকা এনে ব্যবসা শুরু করতে পারব।
এদিকে, আগুনে এনেক্সকো টাওয়ারের অনেক দোকান ও গুদামঘর পুড়ে গেলেও নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত বেশকিছু দোকানের ক্ষতি হয়নি। দোকান খুলে এরই মধ্যে ব্যবসা শুরু করেছেন ভবনটির ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার দুপুরে এ ভবনের নিচতলার বিক্রমপুর গার্মেন্টসের মালিক নাজমুল যুগান্তরকে বলেন, দোকান খুলে বসেছি। বেচাবিক্রি শুরু হয়নি। স্বাভাবিক হতে আরও বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে। এদিকে এনেক্সকো টাওয়ারের ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছে, এ মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো তালিকা দেননি। তাদের প্রত্যেকেরই ইন্স্যুরেন্স করা আছে। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন তারা।
৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। এতে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগরী মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেটের সব দোকান পুড়ে যায়। এছাড়া মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের ৭৯১টি দোকান পুড়ে যায়। এছাড়া এনেক্সকো টাওয়ার, বঙ্গ ইসলামীয়া ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় ওই দিন দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।