Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড

ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি

চৌকি পেতে বসবেন ব্যবসায়ীরা * কাল মেয়রের সঙ্গে বৈঠক

Icon

ইকবাল হাসান ফরিদ

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি

ভয়াবহ আগুনে নিঃস্ব বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের এখন সম্বল শুধু হতাশা আর কান্না। এ অবস্থায় ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়াতে চান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। এজন্য চলছে নতুন করে ব্যবসা সাজানোর প্রস্তুতি।

সরকার কতটুকু আর্থিক সহযোগিতা করবে সেদিকে তাকিয়ে আছেন ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসায়ী। তবে তারা আশাবাদী এ সপ্তাহের মধ্যেই চৌকি পেতে বসে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আর এতে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন, কাল বিকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। ওই বৈঠক থেকে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ এবং সাময়িকভাবে বসার বিষয়ে এমনকি স্থায়ী মার্কেট নির্মাণের বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পোড়া ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে আরও অন্তত দুদিন সময় লাগবে। এগুলো সরানোর পরই ত্রিপল টানিয়ে চৌকি পেতে বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বসার ব্যবস্থা করা হবে।

অন্যদিকে আগুনের ঘটনার সময় জীবন বাজি রেখে যারা কিছু মালামাল বের করতে পেরেছিলেন, তাদের কেউ কেউ তাদের জীবিকার এ শেষ সম্বলটুকু নিয়ে বসেছেন ধ্বংসস্তূপের পাশে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের ফুটপাতে।

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, অন্তত ৫০ জন দোকানি অক্ষত অথবা সামান্য ছাই-কালি লাগা শার্ট, প্যান্ট, ট্রাউজার, টি-শার্ট সাজিয়ে বিক্রির চেষ্টা করছেন। ধ্বংসস্তূপের পোড়া গন্ধের পাশেই কানে আসছে দোকানিদের হাঁকডাক। ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম যুগান্তরকে বলেন, যে জিনিসগুলো ছিল, এগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করছি। বিক্রিবাট্টা খারাপ হচ্ছে না।

এদিকে আংশিক ক্ষতি হওয়া বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স ও বঙ্গ ইসলামীয়া মার্কেট রোববারের মধ্যে খুলতে কাজ শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে ভাঙাচোরা জিনিসপত্র সরানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও দেওয়ালে রংয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

মহানগর কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুর রহমান শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। মেয়রের সঙ্গে রোববার বিকালে আমাদের বৈঠক হবে। বৈঠকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তার হাতে দেব। এছাড়া ঈদের আগে যত দ্রুত সম্ভব ফুটপাতের মতো করে চৌকি বসিয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের বসানোর ব্যবস্থা করতে চাই। যাতে কিছুটা হলেও তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন। তিনি বলেন, স্থায়ী ভবন নির্মাণের বিষয়েও আলোচনা চলছে।

গুলিস্তান কমপ্লেক্সের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রণোদনা দিয়ে ধ্বংসস্তূপের লোহালক্কড় ৪০ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছে। এই টাকা ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর কাজে ব্যয় করা হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ৩৯৬১ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাদেরকে সমন্বয় করে বসানোর ব্যবস্থা করা হবে। স্থায়ী ভবন নির্মাণের বিষয়েও ব্যবসায়ীদের সহমত রয়েছে। আমরা আশাবাদী এ সপ্তাহের শেষের দিকে ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসানো যাবে।

এদিকে স্থায়ী ভবন নির্মাণ নিয়ে অজানা শঙ্কা কাজ করছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে। দোকান মালিক মো. মাছুম যুগান্তরকে বলছেন, আগুনে কোনো মার্কেট পুড়ে গেলে দোকানের পজিশন অনেক সময় বেহাত হয়ে যায়। আর এই বঙ্গবাজারের পুরো কাঠামোই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন নিজের পজিশন পাব কি না জানি না।

তিনি বলেন, আমরা চাই সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিক। আর ক্ষতিপূরণ নিয়ে যাতে কোনো ধরনের দুর্নীতি না হয়, সেদিকে যাতে সরকারের সংশ্লিষ্টরা নজর রাখেন।

এর আগে শুক্রবার সকালে ডিপিডিসির কর্মীদের কাজ করতে দেখা যায়। একজন কর্মী জানান, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবাজারে থাকা ট্রান্সফরমার দুটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে ওই এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। পরদিন বিদ্যুৎ আংশিক চালু করা হয়। শুক্রবার সকালে আগুন পুরোপুরি নেভার পর বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করে ডিএনসিসিসহ বিভিন্ন সংস্থারকর্মী। সকাল ১১টার দিকে পুড়ে যাওয়া লোহার শাটার এবং অন্যান্য লোহার জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে দেখা যায়। ৪টি ট্রাকে করে দিনভর ধবংসস্তূপ সরানোর কাজ করতে দেখা গেছে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের।

শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১১টায় দেখা যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বঙ্গবাজারে পোড়া ধ্বংসস্তূপে কিছু একটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, এখানে আমার পাঁচটি দোকান ছিল; সব পুড়ে গেছে। আমি এখন কোথায় যাব। আমি এখন নিঃস্ব। পুনর্বাসন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরকার করে দিলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে।

গত ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুন লাগে। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকটি বিপণিবিতানেও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান পুড়েছে। এতে অন্তত হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম