Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

টাঙ্গাইলে নানা নাটকীয়তার পর মামলা

বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

ডাক্তারি পরীক্ষায় কিশোরীর অন্তঃসত্ত্বার প্রমাণ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

গোলাম কিবরিয়া বড় মনির

টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ডাক্তারি পরীক্ষায় কিশোরীর অন্তঃসত্ত্বার প্রমাণও মিলেছে। এ ঘটনায় নানা নাটকীয়তার পর বুধবার রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বড় মনি ও তার স্ত্রী নিগার আফতাবকে আসামি করা হয়েছে। বড় মনি টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ-সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই। বৃহস্পতিবার ওই কিশোরী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়-ভাইয়ের সঙ্গে ওই কিশোরীর পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ হয়। এ নিয়ে বড় মনির সঙ্গে কিশোরীর হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন মনি। ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালতপাড়ায় মনি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে যেতে বলেন। সেখানে গেলে ওই কিশোরীকে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন মনি। রাজি না হওয়ায় তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর কক্ষে প্রবেশ করে তাকে মনি ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ শেষে কারও কাছে এ ঘটনা প্রকাশ করতে তিনি নিষেধ করেন। প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর থেকে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং প্রথমবার ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে তাকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করা হতো। এতে কিশোরীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা বড় মনিকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দেওয়া হয়। সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে মনি তাকে আদালতপাড়ার বাড়িতে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। রাজি না হওয়ায় বাসায় এক কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সেখানে তাকে আবারও ধর্ষণ করেন মনি। একপর্যায়ে তার স্ত্রী কিশোরীকে মারধর করেন। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত ৩টার দিকে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তাকে নানা হুমকিও দেওয়া হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার রাত ১১টা ২২ মিনিটে ওই কিশোরী কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান, দুপুর ২টায় মামলা করতে তিনি থানায় যান। মামলা না নিয়ে পুলিশ তাকে একটি কক্ষে বসিয়ে রাখে। কারও সঙ্গে কথা বলতেও দেওয়া হয়নি। এ সময়ে তাকে কোনো খাবারও দেওয়া হয়নি। ওয়াশরুমে যেতে দেওয়া হয়নি। তার আইনজীবীকেও থানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমন অবস্থায় তিনি আত্মহননের হুমকি দেন। রাতে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মামলা নেওয়া হয়নি বলেও তিনি জানান। তবে মামলার নথিতে রাত ১০টা ৫ মিনিটে অভিযোগটি পেশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া যুগান্তরকে বলেন, ইফতার ও তারাবির নামাজের কারণে মামলা নিতে সময় লেগেছে। পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমানকে এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। ২২ ধারায় আদালতে ওই কিশোরী জবানবন্দি দিয়েছেন। টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কিশোরীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেছেন। পরে তাকে তার ফুপুর জিম্মায় দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার আদালত থেকে বের হয়ে ওই কিশোরী বলেন, আমি বিচার চেয়েছি। ন্যায়বিচার পাব বলে আমি আশা করি।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান জানান, গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট লুৎফুন্নাহারকে প্রধান করে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড করা হয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে কিশোরীর অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। কনসালট্যান্ট লুৎফুন্নাহার বলেন, পরীক্ষার ফলাফল ছাড়া ধর্ষণের বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না।

ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম কিবরিয়া বড় মনি মোবাইল ফোনে বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ মামলা করা হয়েছে। জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি বড় মনির। এর আগে ২০১৯ সালের আগস্টে এক স্কুলছাত্রীর সঙ্গে তার ৩১ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে টাঙ্গাইলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম