Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধের চাপ

সরকারের পরিচালন ব্যয়ে উল্লম্ফন

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের পরিচালন ব্যয়ে উল্লম্ফন

সরকারের পরিচালন ব্যয়ে উল্লম্ফন। প্রতীকী ছবি

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সরকারের পরিচালন খাতে বড় অঙ্ক ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরে প্রণয়ন হচ্ছে আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেট। অর্থ বিভাগের হিসাবে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা দাঁড়াবে এ খাতের ব্যয়। যা চলতি বাজেটের তুলনায় প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। মূলত ভর্তুকি-প্রণোদনা ও ঋণের সুদ ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এই উল্লম্ফন। অর্থ বিভাগ মনে করছে চাপ থাকলেও ব্যয় মেটানো সম্ভব। কারণ আগামীতে রাজস্ব আদায় বাড়বে-এমনটি ধরে নিয়ে হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে।

তবে অর্থনীতিবিদদের দেশের ইতিহাসের রেকর্ড এই প্রথমবার সুদ ব্যয়ে এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ভর্তুকিসহ অন্যান্য ব্যয়ও অস্বাভাবিক বেড়েছে। তাদের শঙ্কা শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের ব্যয় সামলাতে সরকারকে টাকা ছাপাতে হতে পারে। আর সেটি হলে সামষ্টিক অর্থনীতিকে নষ্ট করে দেবে।

সূত্র মতে, সরকার পরিচালনা খাতের মধ্যে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে ব্যয় হবে দুলাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং ঋণের সুদ পরিশোধে এক লাখ দুহাজার ৩৭৬ কোটি টাকা, জিডিপির দুশতাংশ। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় ৭৭ হাজার কোটি টাকা, পণ্য ও সেবা খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় হবে ৭২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, সুদ ও ভর্তুকিসহ সার্বিক ব্যয় পরিশোধে প্রয়োজনীয় এত অর্থ সরকার পাবে কোথায়। এক হতে পারে সরকার টাকা ছাপাবে। আর সেটি করতে গেলে সামষ্টিক অর্থনীতির পদ্ধতি নষ্ট হবে। তিনি আরও বলেন, অস্বাভাবিক ব্যয় বাড়িয়ে সরকার নিজেই নিজের একটি জালের মধ্যে আটকে পড়ে যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরে সব মিলে মোট রাজস্ব আয় চার লাখ কোটি টাকা হতে পারে। ফলে এই বাজেট বাস্তবসম্মত নয়, কাগজে-কলমে মাত্র। তবে সমস্যা হচ্ছে যে, ব্যয়ের প্রাক্কলন হয়েছে সেটি শোধ করতে হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি ঠিক আছে। এখন বড় সমস্যা হচ্ছে ভর্তুকি। সেখান থেকে সরকার বেরিয়ে আসতে পারছে না।

সরকারের পরিচালন খাত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণে। অর্থ বিভাগের হিসাবে সরকারের পরিচালনা খাতের মোট ব্যয়ের ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশই যাবে এই একটি খাতে। ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণে চলতি বাজেটের তুলনায় ৩০ হাজার ৬৮ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ আছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য কমছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে। ফলে ভর্তুকিতে কিছুটা চাপ কমলেও বিগত বছরের বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধ করতে হবে। যে কারণে আগামী অর্থবছরের ভর্তুকি ব্যয়ের চাপ থাকছে।

সূত্র মতে, পরিচালনা খাতে দ্বিতীয় ব্যয় হচ্ছে ঋণের সুদ পরিশোধ। মোট বরাদ্দের ২০ দশমিক ৬০ শতাংশ ব্যয় হবে এ খাতে। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী বাজেটে সুদ খাতে অতিরিক্ত ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। চলতি বাজেটে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয় সুদ পরিশোধে।

সূত্র মতে, সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাত থেকে ঋণ গ্রহণ করছে। ঋণের সুদ পরিশোধে কয়েকটি নেতিবাচক প্রভাব যোগ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-যে ঋণের সুদ ডলারে পরিশোধ করতে হচ্ছে, সেখানে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে টাকার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া বৈদেশিক অনেক ঋণের সুদ হারও আগের তুলনায় বেশি গুনতে হচ্ছে। স্বল্প সুদে এখন বাংলাদেশকে কমই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এর প্রভাবে সুদ ব্যয় বেড়েছে। পাশাপাশি সরকার নিজেও আগের তুলনায় বেশি ঋণ করায় সুদ ব্যয় বেড়েছে।

সরকারের পরিচালনা খাতের তৃতীয় বেশি ব্যয় হবে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায়। এটি মোট ব্যয়ের ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ যাবে এ খাতে। যা চলতি বাজেটের তুলনায় দুহাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বেশি। বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ আছে ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কৃচ্ছ সাধনকালীন এই মুহূর্তে চাকরিজীবীদের জাতীয় পে-স্কেলের কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। স্বাভাবিক নিয়মে বছর শেষে মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হবে। যে কারণে বেতন-ভাতায় বড় ধরনের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না আগামীতে।

সূত্র জানায়, বুধবার ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ এবং ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে সরকারের পরিচালনা ব্যয় নিয়ে আলোচনা হয়। এই ব্যয়ের বিপরীতে বলা হয়, নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর আয় ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় বাড়াতে আগামী জুন থেকে দোকানে দোকানে ভ্যাট আদায়ের জন্য ইএফটি মেশিন দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া করজালের আওতা সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে।

কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের কেনাকাটা কাটছাঁট করেছে। ফলে চলতি অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩৮ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। আগামী বছর এ খাতে ব্যয় হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম