Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড

কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন জানেন না ব্যবসায়ীরা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন জানেন না ব্যবসায়ীরা

বঙ্গবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হাজারো ব্যবসায়ী। সোমবার রাতেও অনেকেই ছিলেন কোটি টাকার মালিক, কিন্তু আজ অনেকের পকেটে ইফতারি কেনারও টাকা নেই।

এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানেন না কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন। ক্ষতিপূরণের সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস মেলেনি। সরকার, ব্যবসায়ী সংগঠন ও অন্য পক্ষগুলো শোক ও সমবেদনা জানালেও সুনির্দিষ্ট সহযোগিতার কথা বলছেন না কেউ।

সর্বস্ব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারি থামছে না। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে অনেকের। আগুনে ৫ হাজারের বেশি দোকান পুড়ে গেছে। দোকান মালিক, উদ্যোক্তা, কর্মচারী, ব্যবসায়ী, দিনমজুর, সারা দেশের খুচরা ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদক, ফুটপাতের হকার, ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি মিলিয়ে লাখো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ঘটনাস্থলে এখনো পোড়া গন্ধ।

ব্যবসায়ীরা তাকিয়ে আছেন সরকারের দিকে। অর্থনীতিবিদরাও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী দোকান মালিক সমিতি। বঙ্গবাজারের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এছাড়া শোক জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। তবে এখনো কোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেয়নি সংগঠন দুটি। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের আরেক সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।

জানতে চাইলে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ওই তালিকা পেলে কিছুটা একটা হবে বলে আশাবাদী। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, এখনো তার তালিকা করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে আরও তিন থেকে চার দিন লাগতে পারে।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি (ক-ইউনিট) বেলায়েত হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা বিধ্বস্ত। এখনো তাদের কান্না থামেনি। তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস মেলেনি। আমরা সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই ঘটনায় ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু মানুষ একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। এদের জন্য মানবিক সাহায্য জরুরি। এক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হবে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে ক্ষতিপূরণ জরুরি। সরকারের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা সামনে যাতে আর না ঘটে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বা মার্কেটগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

মেট্রোপলিটন চেম্বারের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, একটি দায়িত্বশীল ব্যবসায়ী সংগঠন হিসাবে এমসিসিআই কমিউনিটির পাশে দাঁড়াবে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহমর্মিতা জানাচ্ছি। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আমাদের কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য অংশ। সংগঠনের সক্ষমতা অনুসারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা করা হবে।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বুধবার বঙ্গবাজারের ৮টি মার্কেটের ৫ হাজারের বেশি দোকান পুড়ে গেছে। প্রতিটি দোকানে লাখ থেকে ৫ কোটি টাকার পর্যন্ত পণ্য ছিল। পুড়ে যাওয়া মার্কেটগুলোর দোকানে মূলত প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, থ্রিপিস ও শাড়ি ছিল।

ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে টানা দুই বছর ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির ছিল। এরপর ২০২২ সালে অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যবসায় মন্দা নেমে আসে। তাদের প্রত্যাশা ছিল এবার ঈদে বেচাকেনা বাড়বে। এতে করে আগের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে টিকে থাকা যাবে। এজন্য ধারদেনা করে হলেও পুঁজির সর্বোচ্চ বিনিয়োগ ছিল এবার। অগ্নিকাণ্ডে শুধু ব্যবসায়ী নয়, দোকান মালিক, লাখো কর্মচারীর ঈদের বেতন-বোনাস সবকিছুই এর সঙ্গে জড়িত।

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের ভিন্ন ভিন্ন কথা রয়েছে। দোকানের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীদের অনেকে দাবি করছেন, দোকানের সংখ্যা ৫ থেকে ১২ হাজারের মধ্যে। অনেক ব্যবসায়ীর দাবি সবমিলিয়ে তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। সহায়-সম্বল হারানোর পাশাপাশি অনেকে বিভিন্ন ব্যাংকে বড় অঙ্কের ঋণগ্রস্ত রয়েছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম