আগুনের উৎস নিয়ে ধোঁয়াশা
ফায়ার সার্ভিস এলেও ছিল পানিস্বল্পতা
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুনের উৎস নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। একপক্ষ বলছে, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। আরেক পক্ষ বলছে, আগুন লাগানো হয়েছে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে আগুন নেভানোর গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ করেছেন দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাশাপাশি অবস্থান করায় আদর্শ, মাহানগর, বঙ্গ ও গুলিস্তান মার্কেটগুলো সাধারণত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। ফজরের নামাজের পর আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগার পরপরই মার্কেটে থাকা সিকিউরিটি গার্ড ও ইলেকট্রিশিয়ানরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে তারা ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। দীর্ঘ সাড়ে ৬ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার তথ্য জানায় ফায়ার সার্ভিস।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মহানগর মার্কেটের সিকিউরিটি ইনচার্জ মো. দলিল উদ্দীন যুগান্তরকে বলেন, ফজরের নামাজের পরই আমরা আগুন লাগার কথা শুনতে পাই। আগুনের সূত্রপাত মূলত আদর্শ মার্কেটের তিনতলা থেকে। আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা ৫-৬ জন সিকিউরিটি গার্ড ও মার্কেটে থাকা ইলেকট্রিশিয়ানরা গ্যাস (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) মেরে আগুন থামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় আমাদের কাছে থাকা খাবার পানির বোতলের পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি।
ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যখন দেখলাম আগুন নেভানো সম্ভব হচ্ছে না, তখন আমার সহযোগীদের ফায়ার সার্ভিসে খবর দিতে বলি।
মহানগর মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ড মো. নাজিম যুগান্তরকে বলেন, আমরা আগুন নেভানোর জন্য ৮-৯টা গ্যাস ব্যবহার করেছিলাম। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। পরে কয়েকজন মিলে গেটের এপার থেকে ডাক দিয়ে বলি আগুন লেগেছে।
ফায়ার সার্ভিস আসার বিষয়ে জনাতে চাইলে তিনি বলেন, তারা খবর পাওয়ার পর এসেছে। কিন্তু তারা পানি দিতে দেড়ি করেছে। তাদের পানির কোনো গতি ছিল না। একপর্যায়ে তারা পানির সংকটের কথা জানান।
কীভাবে আগুন লেগেছে জানতে চাইলে নাজিম বলেন, আমার যতদূর ধারণা, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। কারণ, তখন মার্কেট বন্ধ ছিল। অন্যভাবে আগুন লাগার কারণ দেখি না।
এদিকে আগুন লাগার বিষয়ে ভিন্নকথা জানান মহানগর মার্কেটের ইলেকট্রিশিয়ান মো. সুমন মিয়া। তিনি বলেন, মার্কেট বন্ধ হওয়ার পরও মার্কেটের ভেতরে বিদ্যুৎ থাকে। কিন্তু এটা শর্ট সার্কিট থেকে লেগেছে বলে মনে হয় না। যদি শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে, তাহলে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ত না। আমার মনে হয় কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসকে বলার ২০ মিনিট পর তারা এসেছে। যদিও তাদের অফিস আমাদের পাশেই। এরপর তারা শুধু কয়কটি গ্যাস নিয়ে আসে। কিন্তু পানি দেয়নি। পানির সংকটের কথা জানিয়েছিল তারা।
আদর্শ মার্কেটের মায়ের দোয়া মার্কেটের মালিক লিপি আক্তার বলেন, আমি যখন আসি, তখনও আমার দোকানে আগুন পৌঁছায়নি। ফায়ার সার্ভিস আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। যদি ঢুকতে দিত, তাহলে আমরা আগুন নেভাতে ও মালামাল বাঁচাতে পারতাম। আমাদের আটকিয়ে রাখা হলেও তারা পর্যাপ্ত পানি দেয়নি। তাদের এত বড় বড় গাড়ি, এগুলো সকালে তো দেখিনি।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। উৎসুক জনতার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হয়েছে।
মো. মাইন উদ্দিন জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের যে ৮ কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাদের দুজনের অবস্থা গুরুতর।
আগুনের কারণ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, এ ঘটনায় আমরা ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করব। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগুন লাগার কারণ বলা যাবে। এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তদন্তের পর জানানো যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।