Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বাংলাদেশ-রাশিয়া যৌথ কমিশন বৈঠক

আলোচনায় সীমাবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেই

বাংলাদেশের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এপ্রিলে আসছে প্রতিনিধিদল * সই হয়নি প্রটোকল

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আলোচনায় সীমাবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেই

শুধু আলাপ-আলোচনায়ই সীমাবদ্ধ ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার তিন দিনের যৌথ কমিশনের ভার্চুয়াল বৈঠক। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ঋণের কিস্তির পরিশোধ এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ (প্যাকেজ) এ অর্থায়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুদেশের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে আসেনি কোনো সিদ্ধান্ত। তবে সমস্যার সমাধানে সরাসরি রাশিয়ার প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-কূটনৈতিক চ্যানেলে আলোচনার পর দিন-তারিখ ঠিক করা হবে। সম্ভাব্য সময় হিসাবে আগামী এপ্রিলেই প্রতিনিধিদলটি আসার কথা রয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
উল্লিখিত দুটি ইস্যু ছাড়াও বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তি, ডাক ও টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তার বিষয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার শেষ হয় বৈঠকটি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষ-২-এ অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুদিন বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগর (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও ইউরোপ উইংয়ের প্রধান উত্তম কুমার কর্মকার। শেষদিনে নেতৃত্ব দেন ইআরডির সচিব শরিফা খান। রাশিয়ান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন রাশিয়া ফেডারেশনের ফেডারেল এজেন্সি ফর ফিশারিজের প্রধান ইলিয়া ডি শেসতাকভ।
বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইআরডির সচিব শরিফা খান যুগান্তরকে বলেন, এ বৈঠকে ফলাফল বলতে তেমন কিছুই নেই। কারণ বড় ইস্যুগুলোর আলোচনা হলেও এমন বৈঠকে সমাধানের বিষয় নয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জটিলতাসহ অন্যান্য বিষয় সমাধান বের করতে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা সেটি গ্রহণ করেছে। আশা করছি শিগগিরই প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করবে। তিনি আরও বলেন, ভার্চুয়াল বৈঠকে বলা এবং বোঝার মধ্যে গ্যাপ থাকে। তাই আমরা তাদের সঙ্গে সরাসরি বসতে চেয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রটোকল সই হয়নি। কেননা ভার্চুয়ালি তো কোনো স্বাক্ষর করা সম্ভব নয়। তবে এটি চলমান প্রক্রিয়া। 
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রটোকল বলে কিছু নেই। তবে তিন দিনে যেসব বিষয় আলোচনা হয়েছে, সেগুলোর একটি কার্যবিবরণী তৈরি করা হবে। কার্যবিবরণীতে কী থাকবে, তা উভয় পক্ষের মধ্যেই মোটামুটি জানা হয়ে গেছে। কার্যবিবরণীটিই মনে করা হবে প্রটোকল। যেহেতু এই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। তাই পরবর্তী বৈঠকের পরই সবকিছু চূড়ান্ত হবে। 
বৈঠক সূত্র জানায়, ফলাফল শূন্যভাবে বৈঠক শেষ হলেও কিছু কিছু বিষয়ে আলাপ-আলোচনা উভয়পক্ষ মোটামুটি একমত ছিল। এগেুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখিয়েছে রাশিয়া। এ বিষয়ে বাংলাদেশও আগ্রহ দেখিয়েছে। সেই সঙ্গে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহায়তার বিষয়ে আলোচনায় কাছাকাছি অবস্থান করেছে দুই দেশ। সেই সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা, গ্যাস ও কয়লার গভীর অনুসন্ধান, বিদ্যুৎ খাতে চলমান সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উচ্চতর প্রক্ষিণের বিষয়গুলোয় খুব বেশি দ্বিমত ছিল না। 
জানতে চাইলে ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, কমিশনের বৈঠক হলেই যে প্রটোকল সই করতেই হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে যদি পরবর্তীকালে চুক্তি সইয়ের কোনো বিষয় থেকে থাকে কিংবা কোনো কোনো ইস্যুতে উভয়পক্ষই একমত হতে পারে, তখন একটা প্রটোকল সই হওয়া উচিত। রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে যদি একটি কার্যবিবরণী তৈরি হয়, তাহলেই চলবে। কেননা এই বৈঠকের পর কোনো চুক্তি বা পুরোপুরি একমত হওয়ার কোনো বিষয় নেই। তবে প্রটোকল হলে ভালো হয়। 
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেষদিন বুধবার নতুন বিষয় খুব বেশি আলোচনায় আসেনি। দুই দিনের আলোচিত বিষয়গুলোই ঘুরে-ফিরে আবারও আলোচনায় আসে। সেখানে বড় ইস্যুগুলোর মধ্যে প্রধান ছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কিস্তি পরিশোধে যে সমস্যা চলছে, সেটির সমাধানের পথ বের করা। এক্ষেত্রে প্রথম দিনে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দ্বিতীয় এবং শেষদিনও আলোচনায় আসে এই ইস্যু। কেননা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এটিই রশিয়ার ঋণে বাস্তবায়নাধীন একমাত্র বৃহৎ প্রকল্প। কিন্তু ডলারে লেনদেনে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাশিয়ার ঋণের কয়েকটি কিস্তি বাকি রয়েছে। এই জটিলতা কাটাতে এর আগে নানা প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। এক্ষেত্রে রাশিয়ান মুদ্রা রুবল অথবা চীনের বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলো পর্যালোচনা করে রুবল বা অন্য কোনো মুদ্রায় কিস্তি পরিশোধ বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক হবে না বলে মনে করা হয়। রাশিয়ার পক্ষে এই বৈঠকে এসব বিষয়ই তুলে ধরা হয়। কিন্তু ভার্চুয়ালি আলোচনায় কোনো সামাধনের পথ বের না হওয়ায় বাংলাদেশ রাশিয়ার প্রাতনিধিদলকেই সরাসরি বৈঠকের আমন্ত্রণ জানায়। এছাড়া দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে মঙ্গলবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্যাকেজে (তিনটি স্যাটেলাইট যুক্ত আছে) ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে এ প্রকল্পে কী ধরনের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা হবে, সেটিও জানানো হয়। এতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়ে মত দেওয়া হলেও শেষদিনের বৈঠকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। পাশাপাশি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পক্ষে মোবাইল রোমিংয়ের খরচ কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় দ্বিতীয় দিনের বৈঠকেই। অর্থাৎ রাশিয়ার কোনো নাগরিক যদি বাংলাদেশে এসে তাদের দেশে কল করেন, তাহলে খরচ হয় ৪৫০ টাকা। কিন্তু এই টাকার মধ্যে বাংলাদেশ পায় ২০ টাকার মতো। বাকি টাকা পুরোটাই রাশিয়া নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে এই কলের খরচ কমানো এবং বাংলাদেশের প্রাপ্তির অংশ বৃদ্ধির বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। শেষদিন এ বিষয়েও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি উভয় পক্ষ।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম