ব্যাংকের টাকা ছিনতাই
মূল পরিকল্পনাকারী মানি প্ল্যান্টের সাবেক গাড়িচালক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর উত্তরার তুরাগে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী সিকিউরিটি এজেন্সি মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেডের সাবেক গাড়িচালক সোহেল রানা। তার সঙ্গে আকাশ ও সানোয়ার নামে আরও দুজন পরিকল্পনায় ছিল।
আর সরাসরি ছিনতাইয়ে যোগ দেয় আরও কয়েকজন। এর মধ্যে আকাশসহ ১১ জন গ্রেফতার হয়েছে। তবে সোহেল রানা ও সানোয়ার ধরা পড়েনি। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সাত কোটি এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
সর্বশেষ মঙ্গলবার বনানীর করাইল বস্তি ও নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থেকে তিনজন গ্রেফতার হয়। তারা হলো-হৃদয় (২১), মিলন মিয়া (২৯) ও মো. আকাশ। তাদের কাছ থেকে ৫৮ লাখ সাত হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের কবলে পড়া গাড়ির নকল চাবি ছিল ডাকাতদের কাছে। ওই চাবির মাধ্যমে সুইচ টিপে গাড়ির দরজা খোলে ডাকাতরা।
হারুন অর রশীদ বলেন, সোহেল রানা আগে মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেডের ড্রাইভার ছিল। এ কারণে সে মানিপ্ল্যান্টের খুঁটিনাটি সম্পর্কে অবগত। ফলে বাধাহীনভাবেই তারা মাইক্রোবাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ছিনতাইয়ের মূল হোতা আকাশ টাকা লুটের পর মাইক্রোবাসে উঠতে না পারলেও সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টাকা লুটের পরিকল্পনা নিয়ে ইমন ওরফে মিলনের সঙ্গে আলোচনা করে আকাশ। সে মিলনকে এই কাজে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, হুন্ডির টাকা ধরতে হবে। এজন্য কিছু লোক প্রয়োজন। আমাদের সঙ্গে প্রশাসনের লোকজন থাকবে।
মিলন তার পূর্ব পরিচিত সানোয়ার হোসেনকে বিষয়টি জানায়। তাকে জনবল ও সিম সংগ্রহ এবং মোবাইল ফোন কেনার দায়িত্ব দেয়। সানোয়ার আটটি নতুন সিম ও মোবাইল সেট জোগাড় করে। পাশাপাশি তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে ৯ জন সংগ্রহ করে। তারা প্রত্যেকে ঘটনার দুদিন আগে ঢাকায় একত্রিত হয়। পরিকল্পনাকারীরা তাদের নতুন কাপড় ও জুতা কিনে দেয়।
ডিবি জানায়, আকাশ ও সোহেল রানা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের বিষয়টি গোপন রাখে মিলন ও সানোয়ারের কাছে। ঘটনার দিন সবাই কুর্মিটোলায় একত্রিত হয়। মাইক্রোবাসে ওঠার পর মিলন ও সানোয়ার বুঝতে পারে বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
ডাকাতির পর মূল হোতা আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ডাকাতরা ধারণা করে যে আকাশ হয়তো ধরা পড়েছে। ধরা পড়ার ভয়ে অন্যরা ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো ৩০০ ফিট এলাকায় ফেলে দেয়। তাড়াহুড়ো করে ট্রাংক ভেঙে টাকা লুট করে। পরে ডাকাতরা ৩০০ ফিট এলাকার নির্জন একটি জায়গায় গিয়ে ব্যাগ এবং বস্তায় টাকা ভরে নিয়ে যার যার মতো করে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, ডাকাতিতে অংশগ্রহণকারীদের সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল থেকে আনা হয়। ডাকাতির পর তারা বেশ কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ করে।
ফলে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত, গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। লুট করা টাকার একটি বড় অংশ নিয়ে পালিয়েছে মূল হোতা সোহেল রানা। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তাকে গ্রেফতার করে আকাশের মুখোমুখি করা হলে বিস্তারিত জানার পাশাপাশি আরও টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এর আগে শনিবার আট ডাকাতকে গ্রেফতার করে ডিবি। তারা পাঁচ দিনের রিমান্ডে ডিবি হেফাজতে আছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, আমরা বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি।
ডাকাতির ঘটনায় কয়েক স্তরে বিভিন্নজনের আলাদা দায়িত্ব ছিল। কেউ ছিল পরিকল্পনাকারী, কেউ ছিল মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ ছিল কামলা ও কামলা সংগ্রহকারী। মূল পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে আকাশ ও সোহেল রানাই প্রধান।
গত ৯ মার্চ রাজধানীর উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মানিপ্ল্যান্ট লিংকের গাড়িতে করে ওই টাকা বহন করা হচ্ছিল। একটি চক্র মানিপ্ল্যান্ট লিংকের গাড়ি ঘিরে ধরে টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। গাড়িটি বুথে টাকা লোড করতে ঢাকা থেকে সাভার ইপিজেড যাচ্ছিল।
পলাতক সোহেল রানা মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেডে কর্মরত ছিল কিনা জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোদা জীবন দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, সে আমার প্রতিষ্ঠানে ছিল কিনা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে নামটি পরিচিত। সে যদি টাকা লুটের সঙ্গে জড়িত থাকে অবশ্যই তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা উচিত।