অগ্নিঝরা মার্চ
প্রতিটি দিনই অনুপ্রেরণা ও শক্তির উৎস
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতাসংগ্রামের ঘটনাপ্রবাহে নানা কারণে এই মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এই মাসের প্রতিটি দিনই বাঙালি জাতির জন্য অনুপ্রেরণা ও শক্তির উৎস। স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয় এ মাসে।
মার্চেই বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তুলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। উত্তাল একাত্তরে মার্চজুড়ে বাঙালির চোখে ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রতিবছরের মতো এবারও মার্চের প্রথম দিন থেকেই বাঙালি জাতি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাসংগ্রামে শহিদদের স্মরণ করবে।
১৯৭১ সালে যে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে, এর গোড়াপত্তন হয়েছিল বহু বছর আগে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলনের পথ ধরে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চে এসে বাঙালির সেই স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতিকে স্পর্শ করে। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের গহিনে লালন করা ‘স্বাধীনতার’ দুর্বার আকাঙ্ক্ষা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত লাখো বাঙালির সামনে দাঁড়িয়ে দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই মার্চেই বাঙালি পাকিস্তানকে বিদায় জানায়। ৭ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর বজ কণ্ঠের দৃপ্ত ঘোষণা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার নতুন সূর্য অর্জনের প্রেরণা জুগিয়েছিল। সেই ভাষণের প্রতিটি শব্দ ছিল বাঙালির স্বাধীনতাসংগ্রামের প্রতিটি মুহূর্তের অন্তর্নিহিত শক্তির আধার।
একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানিরা বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে গণহত্যা শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে হত্যা করে ছাত্র-শিক্ষককে। রাস্তায় যাকে পাওয়া যায়, তাকেই হত্যা করে। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। কিন্তু এর আগেই বঙ্গবন্ধু দিয়ে যান স্বাধীনতার ঘোষণা। এর পরের ঘটনাপ্রবাহ প্রতিরোধের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলে বাঙালি। মুক্তিকামী জনতা, যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বের বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে জাতি লাভ করে স্বাধীনতা।
অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন থেকেই নানা কর্মসূচি পালন করবে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বীর শহিদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি পালন করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ ছয় দিনব্যাপী পথনাটক উৎসবের আয়োজন করেছে। বিকাল সাড়ে ৪টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে উৎসবের উদ্বোধন করবেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। প্রধান অতিথি থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। অনুষ্ঠানে ৩৮ জন নাট্যকারকে সম্মাননা জানানো হবে। ৬ মার্চ পর্যন্ত এ উৎসব চলবে।