সড়কে ঝরল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও পুলিশসহ ১৩ প্রাণ
বগুড়ায় মা-মেয়েসহ পাঁচজন নিহত * কচুয়ায় পিষ্ট বাইসাইকেল আরোহী স্কুলছাত্র
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সারা দেশে বৃহস্পতিবার সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, স্কুলশিক্ষক, পুলিশ, মা-মেয়ে ও মা-ছেলেসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন।
রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, বগুড়ার শাজাহানপুরে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক ও মা-মেয়েসহ পাঁচজন, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পিকআপভ্যানের চাপায় মা-ছেলে, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মোটরসাইকেল ও মাটিকাটা মেশিনের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য, মাগুরার মহম্মদপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্কুলশিক্ষক এবং চাঁদপুরের কচুয়ায় বাইসাইকেল আরোহী স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে।
এছাড়া বুধবার রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মাদ্রাসা শিক্ষক এবং পাবনার সুজানগরে এমপির ব্যক্তিগত গাড়িচালক নিহত হয়েছেন।
যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়কের কাজলা ভাঙা প্রেস এলাকায় সকাল ৯টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় বেসরকারি মুগদা ইসলামী ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক পলক (২৪) নিহত হন। এ ঘটনায় তার সহপাঠী জুয়েল রানা আহত হন। পলকের মামা নাদিম হোসেন জানান, মোটরসাইকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাওয়ার পথে কাজলা ভাঙা প্রেস এলাকায় পলক ও তার বন্ধু জুয়েল দুর্ঘটনার শিকার হন।
আশিয়ান সিটি পরিবহণের একটি বাসের ধাক্কায় তারা গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকরা পলককে মৃত ঘোষণা করেন। জুয়েলের পা ভেঙে গেছে। তার চিকিৎসা চলছে। ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পলকের লাশ রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রামের মীরেরসরাইয়ের মমিনুল হকের ছেলে পলক। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড় ছিল পলক। জিনজিরায় মামা দিদারুল আলমের বাসায় থেকে তিনি পড়াশোনা করতেন। তার বাবা টেক্সটাইল মিলে কর্মরত। জুয়েলের বাসা নারিন্দায়। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। তার বাবা আব্দুর রহিম গাড়িচালক।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, দুপুর ১২টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলায় ঢাকাগামী বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোচালক ও মা-মেয়েসহ পাঁচজন নিহত হয়। অটোরিকশাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় সেটির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।
তবে এলাকাবাসী জানান, দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। নিহতরা হলো-গাবতলীর কালাইহাটা গ্রামের আবদুল করিমের স্ত্রী শাহানা আকতার (৩০), তার মেয়ে হিয়া মনি (৭), একই উপজেলার কদমতলী গ্রামের আবদুল গণির ছেলে অটোচালক হযরত আলী প্রামাণিক (৩৫), ধুনটের বেড়েরবাড়ি গ্রামের দিরাজতুল্লাহর ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী বাদশা (৬৪) এবং অজ্ঞাত এক পুরুষ (২৫)।
শাজাহানপুরের সুজাবাদ দহপাড়া এলাকায় দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কে গাইবান্ধা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী স্বদেশ পরিবহণের একটি বাস এবং গাবতলীগামী সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটো দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে অজ্ঞাত যুবক, গৃহবধূ শাহানা ও বাদশা মারা যান। অটোচালক হযরত ও শিশু মনিকে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা হযরতকে মৃত ঘোষণা করেন। দুপুর দেড়টার দিকে মনি মারা যায়।
বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক খন্দকার আবদুল জলিল জানান, বাসে কেউ আগুন দেয়নি। অটেরিকশার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। শাজাহানপুর থানার ওসি আবদুল কাদের জিলানী জানান, বাস ও অটোরিকশা থানা হেফাজতে রয়েছে। বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছেন।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সকাল ১০টার দিকে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের উল্লাপাড়ায় সিমেন্টবাহী পিকআপ ভ্যানের চাপায় যাত্রীবাহী ভ্যানের যাত্রী মা ও তার ছেলে নিহত ও দুইজন আহত হয়েছে। নিহতরা হলো-চালা গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী করুনা খাতুন (২৬) এবং তার ছেলে তরিকুল ইসলাম (৫)। খলিলুরের মা আহত সাকেরা খাতুন ও ভ্যানচালক আব্দুল জলিলকে সিরাজগঞ্জ বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম জানান, সিরাজগঞ্জ থেকে বাঘাবাড়ীগামী সিমেন্টবাহী পিকআপ ভ্যানের চাপায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলারোয়া উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের সিংহলাল সেতুর পাশে মোটরসাইকেল ও মাটিকাটা মেশিনের মুখোমুখি সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য ইমরান হোসেন (৩২) নিহত হয়েছেন। এ সময় যুবক নয়ন হোসেন আহত হন।
নিহত ইমরান জালালাবাদ ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের মোনায়েম হোসেনের ছেলে। চট্টগ্রামের একটি থানায় তিনি কর্মরত ছিলেন। ছুটিতে বাড়ি এসে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন। আহত নয়নের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কলারোয়া থানার ওসি নাছির উদ্দীন মৃধা জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মাটিকাটা মেশিনটি জব্দ করা হয়েছে।
মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি জানান, সকাল ১০টার দিকে মহম্মদপুর উপজেলার রামপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্কুলশিক্ষক বোরহান উদ্দিন (৩৫) নিহত হয়েছেন। উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের নিত্যনন্দপুর গ্রামের মাওলানা মাহফুজুর রহমানের ছেলে বোরহান। হরেকৃষ্ণপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে রামপুর এলাকায় বোরহান মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তিনি গুরুতর আহত হন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
কচুয়া (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, সকাল ১০টার দিকে কচুয়ার রহিমানগর-মাধাইয়া সড়কে দুর্ঘটনায় স্কুল ছাত্র জুবায়ের আহমেদ শিহাব (১১) নিহত হয়েছে। গোহট উত্তর ইউনিয়নের তালতলী গ্রামের আক্তার হোসেনের ছেলে শিহাব হাসিমপুর মিয়ারবাজার মাতৃছায়া কিন্ডার গার্টেনের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। শিহাব সাইকেলে রহিমানগর বাজারে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে কিভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তা জানা যায়নি।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, সরিষাবাড়ীতে রাস্তা পারাপারের সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মাদ্রাসা শিক্ষক শাহনেওয়াজ শাহীন (৫২) নিহত হয়েছেন। বুধবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের গোবিন্দনগর জামতলা মোড় সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গোবিন্দনগর মধ্যপাড়া গ্রামের মোজাদ্দাদ হোসেনের ছেলে শাহনেওয়াজ একই এলাকার গাডডোবা সিরাতুলনবী আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়ার সময় তিনি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খান। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। বৃহস্পতিবার গোবিন্দনগর মধ্যপাড়া গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
সুজানগর (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনা-২ আসনের সংসদ-সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক ফারুক হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পাবনা-চাটমোহর সড়কের মূলগ্রামে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত ফারুক সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের শিকদারপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেকের ছেলে।