ক্যাম্পাসে ফিরে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ইবি ছাত্রী
ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বুকভরা আশা আর স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি)। ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ভর্তির পরপরই দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ৩০৬ নং কক্ষে ওঠেন অতিথি হিসাবে।
কিন্তু ‘না জানিয়ে হলে ওঠার অপরাধে’ হুমকি দেন হল নেত্রী। এরপর ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। এরপর বাধ্য হয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান। প্রথমদিকে ভয় ও লজ্জায় চুপসে গেলেও রিকশাচালক বাবার অভয় পেয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন তিনি।
দুদিন পর বাবা ও মামাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বাসায় ফিরে যান। শনিবার ফের ক্যাম্পাসে ফিরেছেন তদন্ত কমিটির ডাকে। পরে গণমাধ্যমেরও মুখোমুখি হন। বর্ণনা দেন সেই রাতের ভয়াবহ নির্যাতনের।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা যুগান্তরকে বলেন, আমার বড় ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে। বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। আমি রিকশা চালিয়ে অনেক কষ্ট করে প্রতিটি সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি। ছোট মেয়েটা ক্লাস টেনে পড়ে। আমি আমার সন্তানদের কখনো কারও কাছে মাথা নত করার শিক্ষা দিইনি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, আমাদের বাবা-মা হয়তো আমাদের ঠিকমতো খেতে দিতে পারেন না, ঠিকমতো পোশাক কিনে দিতে পারেন না। কিন্তু তারা আমাদের সবসময় সাহসী, প্রতিবাদী ও সৎ হতে শিখিয়েছেন।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। কমিটির ডাকে দুপুর ১২টার দিকে বাবা ও মামার সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর প্রফেসর জয়শ্রী সেনের তত্ত্বাবধানে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে প্রধান ফটক থেকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তদন্ত কমিটির কাছে সেই রাতের নির্যাতনের বর্ণনা দেন তিনি। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। পরে অভিভাবকের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যান তিনি।
গণমাধ্যমকে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, তদন্তের স্বার্থে আমি ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা সবকিছু স্যারদের বলেছি। এর সুষ্ঠু বিচার চাই আমি।
জানা যায়, হল প্রভোস্ট কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রেবা মণ্ডল ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল প্রভোস্ট তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. আহসানুল হক, প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আরা সাথী ও ভুক্তভোগীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, আমরা তদন্ত সাপেক্ষে বিভিন্ন অফিস ও জায়গায় চিঠি দিয়েছি এবং উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। সরেজমিনে তদন্তের জন্য আমরা হলে গিয়েছিলাম।
মেয়েটি যে যে রুমে ছিলেন প্রজাপতি, দোয়েল-২ ও ৩০৬ নং রুম-সেসব রুমে আমরা গিয়েছি। আমরা এসব রুমে যাদেরকে পেয়েছি তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আর যাদের পাইনি তাদেরও নেওয়া হবে।
সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি তদন্ত কমিটি : ওই রাতে গণরুম ও ডাইনিংয়ে কী ঘটেছিল তা খতিয়ে দেখতে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার কথা জানিয়েছিলেন হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শামসুল আলম।
তিনি বলেন, হলের ভেতর সিসিটিভি রয়েছে তার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দোষীদের শনাক্ত করা হবে। শনিবার তদন্ত শুরু হলে কমিটি সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার গিয়ে করতে বিড়ম্বনায় পড়েন। রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ ক্যামেরা থেকে ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি।
এ বিষয়ে হল তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও সহযোগী অধ্যাপক ড. আহসানুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করতে পারিনি। টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে আমরা ফুটেজ পাচ্ছি না। আইসিটি সেলের দুই টেকনিশিয়ানের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছিল।
তারা জানিয়েছেন, পাওয়ার সাপ্লাই ঠিকমতো না পাওয়া ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ফুটেজগুলো কীভাবে রয়েছে তা জানা যায়নি।
এদিকে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাকে বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি ক্যাডার থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।