মো. সাহাবুদ্দিন ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় সোমবার দুপুর ১টার দিকে তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করেন এ নির্বাচনের নির্বাচনি কর্তা কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এরপরই বিকালে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১-এর ধারা ৭ এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিধিমালা, ১৯৯১-এর বিধি ১২ অনুসারে নির্বাচনি কর্তা ও নির্বাচন কমিশনারের ঘোষণা মোতাবেক মো. সাহাবুদ্দিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় মো. সাহাবুদ্দিনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সোমবার বিকালে তিনি নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে ফোন করে এ অভিনন্দন জানান। ফোনালাপে তারা পরস্পর কুশল বিনিময় করেন।
এদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা (আওয়ামী লীগ) এমন কোনো রাষ্ট্রপতি করিনি যার নাম ইয়াজউদ্দিন, কার্যক্রমে ইয়েস উদ্দিন। এ ইয়েস কোনো ব্যক্তিকে আমরা রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিইনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো অপশক্তির প্রতিনিধিকে মনোনয়ন দিইনি। সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে, আগুন-সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে-এমন কাউকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। নতুন রাষ্ট্রপতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুশিক্ষিত, সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছি। যার ক্যারিয়ার এবং গোটা জীবনটাই বর্ণাঢ্য।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, রাষ্ট্রপতি পদে একজন প্রার্থী থাকায় এ পদে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি। তাই সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়াসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নিয়ম অনুসারে নতুন রাষ্ট্রপতি শপথ নেবেন। বিদায়ি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হবে। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেখানে অধিষ্ঠিত হবেন নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে রোববার মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সেদিনই তার পক্ষে দুটি মনোনয়নপত্র নির্বাচনি কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে জমা দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। ওই সময় মো. সাহাবুদ্দিন নিজেও নির্বাচন ভবনে উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার স্থানে যাননি। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী সোমবার দুটি মনোনয়নপত্রের মধ্যে একটি বাছাই করেন সিইসি।
সেসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্রে ওবায়দুল কাদের প্রস্তাবক ও ড. হাছান মাহমুদ সমর্থক হিসাবে সই করেছিলেন। বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় এবং এ পদে একজন প্রার্থী থাকায় মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করেন সিইসি। তিনি জানান, ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী ১২ ফেব্রুয়ারি (রোববার) নির্ধারিত সময়ে মো. সাহাবুদ্দিনের নামে দুটি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। ১৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) বাছাইয়ের সময় একটি মনোনয়নপত্র সম্পূর্ণরূপে বৈধ হয়। সেক্ষেত্রে আরেকটি মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের আবশ্যকতা ছিল না।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়নপত্র বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী মো. সাহাবুদ্দিন, পিতা-মরহুম শরফুদ্দিন আনছারীকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
সিইসির ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে আওয়ামী লীগের প্রত্যাশার বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী কাজ করলেই আমরা খুশি। সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে যে দায়িত্বভার দিয়েছেন, সেটা তিনি করবেন, সংবিধানের বাইরে কিছু করার থাকবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাই। বিএনপির মতো দল নির্বাচনে থাকুক, এটা আমাদের প্রত্যাশা। রাষ্ট্রপতি পদে বিএনপির আগ্রহ না থাকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখানে তাদের আগ্রহ থাকবে না। দেশের সংবিধানে, গণতন্ত্রে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। গণতন্ত্র ও সংবিধানে যদি আগ্রহ না থাকে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কে হলো-না-হলো, তা নিয়ে তাদের আগ্রহ না থাকারই কথা। এ নিয়ে আমরা অবাক হইনি। বিএনপি এমনই বলবে, এটা তাদের মুখে শোভা পাবে। বিএনপির সংলাপেও আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি তাদের সংলাপে ডেকেছে, যায়নি। ইসির সংলাপে যায়নি। তারা সংলাপে বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না।
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ : বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (আইবিবিএল) পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রোববার রাতেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। সোমবার ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে তার ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের জেএমসি বিল্ডার্স কোম্পানির পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের জুনে তিনি ব্যাংকটির পরিচালক পদে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি পরিচালক পদে থেকেই ওই ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে নিয়োগ পান। রোববার পর্যন্ত তিনি ওই পদে বহাল ছিলেন। রাষ্ট্রপতি পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি ব্যাংকটির পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ফলে তার ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকেও পদত্যাগ কার্যকর হয়ে গেল।