ঘর নেই, রাস্তায় গাছতলায় শীতে কাঁপছেন তুর্কিরা
মার্জিয়া সুলতানা
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গাজিয়ানতেপে এখন হাহাকার। স্বজন হারানোর শোক। সব হারানোর আর্তনাদ। ঘরবাড়ি ধসে গেছে। চারদিকে মৃত্যুর খেলা। এর মাঝেই নতুন আতঙ্ক হিমশীতল তাপমাত্রা। তুষারঝড়-বৃষ্টি বাদ নেই কিছুই। বিপদের পর মহাবিপদ। গত দুদিন ধরেই তুরস্ক-সিরিয়ায় এই দশা। প্রচুর বৃষ্টি। সেইসঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত তুষারপাত।
সোমবার ভূকম্পনের পর থেকে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই রাস্তায়-পার্কে কিংবা গাছের নিচে দিন পার করছেন তুরস্ক-সিরিয়ার মানুষ। বিশেষ করে তুর্কিরা।
গাজিয়ানতেপে দিনের গড় তাপমাত্রাই ৪ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অঞ্চলটিতে রাত হতে না হতে তাপমাত্রা মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে দাঁড়ায়। তবে কিছু কিছু শহর, গ্রাম ও পাহাড়ি এলাকায় তা মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসও হয়। সিরিয়ার তাপমাত্রা যেখানে দিনে ১০ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতে তা দাঁড়ায় মাইনাস ৩-এ। তবে এমন ঠান্ডা আবহাওয়ায়ও যাদের বাড়ি অক্ষত তারা কেউই ঘরে ফিরছেন না। শীত নিবারণে কেউ কেউ রাস্তায় আগুন পোহাচ্ছেন। গৃহযুদ্ধের প্রভাবে জর্জরিত সিরিয়ার ওপর যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে এই ভূমিকম্প। হিমশীতল এই তাপমাত্রায় রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব দেশটিতে আরও প্রকট হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। আলজাজিরা, সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স, স্কাই নিউজ।
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সানলিউরফায় হিমশীতল আবহাওয়ায় কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা, তবুও রাত জেগে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা। একটি ধসে পড়া সাততলা বিল্ডিংয়ের সামনে প্রাণের সন্ধান করছেন উদ্ধারকর্মী ওমর এল কুনিড। সেখানে থাকা ২০ বছর বয়সি সিরীয় এক শিক্ষার্থী জানান, ‘এই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া একজনকে আমি চিনি। সে আমার বন্ধু। বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত আমার ফোনের উত্তর দিচ্ছিল। কিন্তু এখন আর কেউ ফোন ধরছে না। সে ওখানেই আছে।’ স্কাই নিউজে গাজিয়ানতেপ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরের আদানা শহরের বর্ণনা দেওয়া হয়। সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শত শত স্বেচ্ছাসেবক পৌঁছালেও বৈরী আবহাওয়া বাদ সেধেছে উদ্ধার কাজে। তুরস্কের ত্রাণ সংস্থা ইসলামিক রিলিফের কো-অর্ডিনেটর সদস্য মোহাম্মদ হামজা তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামে। ভূমিকম্পের সময় তিনি তার তিন সন্তানসহ উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার আদদানা শহরে ছিলেন। জানান, ‘আমার বাচ্চারা ঘুমাচ্ছিল। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। এখন কি আমি তাদের জাগাব, নাকি তারা ঘুমন্তই থাকবে? আমাদের তো মৃত্যু নিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে তাদের কি ভয় পেতে দেওয়া ঠিক হবে?’ তুরস্কের শীতল আবহাওয়া নিয়েও শঙ্কায় আছেন তিনি।
ভূমিকম্পে বেঁচে ফেরা গাজিয়ানতেপের বাসিন্দা মুস্তফা কারা আলি জানান, ‘আমরা সারা দিন ধরে অপেক্ষা করেছি কিন্তু সরকার থেকে কোনো সাহায্য পাইনি। তখন তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে ঘুমাচ্ছিলেন। নিরাপত্তার জন্য এলাকার মানুষজন হাহাকার করছিল। আবহাওয়া সবকিছুকে আরও কঠিন করে তুলেছে। বাইরে তুষারপাত, ঝড়ো হাওয়া-বৃষ্টি। হাজার হাজার মানুষ পার্কে জড়ো হন। ছিল না কোনো কম্বল, পানি কিংবা আশ্রয়। আমরা সারা দিন অপেক্ষা করেছি এবং সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি। শরণার্থীদের জন্য শিক্ষা প্রদানের দাতব্য সংস্থা কিডস রেইনবোতে কর্মরত আলি জানান, তাদের সব শিশু এবং স্বেচ্ছাসেবক নিরাপদে আছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন তাদের পরিবারের সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। এত অবস্থান করছে প্রায় ৬০০ জন, যার মধ্যে ১২০ জন শিশু। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তীব্র ঝড় উত্তর সিরিয়ায় আঘাত হেনেছে। তীব্র ঠান্ডা, অনেক লোক ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা জায়গায় অবস্থান করছে।