Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নাদিয়ার ফার্মাসিস্ট হওয়ার স্বপ্ন বাসের চাকায় পিষ্ট

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নাদিয়ার ফার্মাসিস্ট হওয়ার স্বপ্ন বাসের চাকায় পিষ্ট

রাজধানীর বেসরকারি নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী নাদিয়া আক্তার। তার বাবা মো. জাহাঙ্গীর কাজ করেন নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে। তিন বোনের মধ্যে নাদিয়া ছিল সবার বড়। তাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতেন বাবা। নিমিষেই সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয় ভিক্টর পরিবহণের একটি বাস। রোববার রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বেপরোয়া বাসটি তাকে মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। মুহূর্তেই বাসের দুই চাকার মাঝামাঝি স্থানে ছিটকে পড়ে নাদিয়া। কিন্তু বাসটি না থামিয়ে তড়িঘড়ি করে ওই ছাত্রীর ওপর দিয়ে গাড়িটি চালিয়েই সটকে পড়ে বাসচালক। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর হাসপাতালে নিলে সেখানে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

বাসের যাত্রী হাসান মামুন জানান, মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন নাদিয়ার বন্ধু মেহেদী হাসান। পেছনে বসা ছিলেন নাদিয়া। ভিক্টর পরিবহণের বাসটি মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ছেলেটি পড়ে যায় ফুটপাতের দিকে আর মেয়েটি গাড়ির দিকে। মেয়েটির মাথা বাসের সামনের ও পেছনের চাকার মাঝামাঝি স্থানে পড়ে। আমরা চালককে বাসটি থামাতে বলি। সে না থামিয়ে বেপরোয়া গতিতে টেনে যায়। এতে মেয়েটির মাথা পেছনের চাকার নিচে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই নিস্তেজ হয়ে যায় নাদিয়ার দেহ। পরে চালক গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়। বাসটিকে জব্দ করে পুলিশ। নাদিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জাহিদুল ইসলাম বলেন, চালকের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। কারণ মোটরসাইকেলটি পড়ে যাওয়ার পর একজন চিৎকার করে বলছিল, ‘এই ড্রাইভার-দাঁড়ান, বাঁচবে বাঁচবে’। তখন তো চালকের টান দেওয়া উচিত হয়নি। দাঁড়ালে অন্তত এটা বোঝা যেত যে, অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাটি ঘটেছে এবং সে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু মাথার ওপর দিয়ে বাসটি চালিয়ে নেওয়ায় অনেকটাই স্পষ্ট যে চালকের খামখেয়ালিতে মেয়েটি মারা যায়।

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান স্থায়ী ক্যাম্পাস রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের উলটো পাশের কাওলা এলাকায়। বাসের চাপায় সহপাঠী নিহতের পর এই এলাকায় প্রায় তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে নাদিয়ার নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ও সতীর্থরা। এতে বিমানবন্দর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। আন্দোলন থেকে নিরাপদ সড়ক ও অভিযুক্ত চালকের বিচার দাবি করেন তারা। পরে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আশ্বাসে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসে।

এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খান যুগান্তরকে বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রীর বন্ধুরা কিছু দাবি নিয়ে কাওলায় জড়ো হয়েছিল। পুলিশ তাদের দাবির বিষয়গুলো শুনেছে। জড়িতদের বিচারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে বলে জানিয়েছে। এরপর তারা ফিরে গেছে।

যোগাযোগ করা হলে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যুগান্তরকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তারা শোক জানিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি নিয়ে কাওলায় গিয়েছিল। পরে জড়িতদের বিচারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছে-এ বিষয়টি তাদের জানানো হয়। তখন তারা ফিরে আসে।

স্বজনরা জানান, পড়াশোনার জন্য নাদিয়া রাজধানীর উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের একটি মেসে থাকতেন। পরিবার থাকত নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায়। ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ছুটে আসেন নাদিয়ার স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তার গৃহিণী মা পারভিন আক্তার। এসেই বিলাপ করতে থাকেন। চিৎকার করে বলেন, ‘আমার মা কই রে...? এক সপ্তাহ আগে ভার্সিটিতে রেজিস্ট্রেশন করে দিয়ে আসলাম। আল্লাহ এক সপ্তাহও পার হতে দিলা না। আমার মেয়েটাকে নিয়ে গেলা? আমি তোমার কাছেই আমার মাকে (মেয়ে নাদিয়া) ছেড়ে দিলাম।’

নাদিয়া প্রাণ হারালেও মেহেদী অক্ষত আছেন। তিনি জানান, তারা ঘুরতে বের হয়েছিলেন। এর মধ্যেই গাড়িটি এসে আচমকা মোটারসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এরপর চিৎকার করলেও বাসটি না থামিয়ে দ্রুতগতিতে চালিয়ে যায়।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। বাসটি আটক আছে। আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম