বিভিন্ন দেশের ইস্যু করা ডিজিটাল মুদ্রা বড় হুমকি
বিটকয়েনের বাজারে চরম অস্থিরতা
২০২১ সালের নভেম্বরে দাম ছিল ৬৪৪০০ ডলার, গত ডিসেম্বরে কমে হয় ১৬,৫২৯ ডলার, ২১ জানুয়ারি বেড়ে হয় ২৩,০২৫ ডলার * ভারত ও চীন সীমিত আকারে ডিজিটাল মুদ্রা বাজারে ছেড়েছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে অনুমোদনহীন ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনের বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে বিটকয়েনের দাম পড়তে শুরু করে। ডিসেম্বর পর্যন্ত পড়েছে। গত ১৪ মাসে এর দাম প্রায় চারগুণ কমেছে।
২০২১ সালের নভেম্বরে এর দাম সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার ৪০০ ডলার উঠেছিল। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা কমে সর্বনিম্ন ১৬ হাজার ৫২৯ ডলারে নেমেছে। ওই সময়ে এর দাম কমেছে ৪৭ হাজার ৮৭১ ডলার।
বিটকয়েনের দামে এত বেশি দরপতনের কারণে যারা এতে বিনিয়োগ করেছিলেন তারা ব্যাপকভাবে পুঁজি হারিয়েছেন। তবে ২ জানুয়ারি থেকে এর দাম বাড়তে শুরু করেছে। শনিবার পর্যন্ত এর দাম বেড়ে ২৩ হাজার ২৫ ডলার হয়েছে। গত ২০ দিনে এর দাম বেড়েছে ৬ হাজার ৪৯৬ ডলার বা প্রায় ৪০ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেনে এখন বিটকয়েনও বিকল্প মুদ্রা হিসাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করেছে। আগে এর ব্যবহার অনেকটা কমে গিয়েছিল। চলতি বছরেও এর বাজারে অস্থিরতা থাকবে বলে সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডিজিটাল মুদ্রা বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চীন সীমিত আকারে ডিজিটাল মুদ্রা বাজারে ছেড়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ১ ডিসেম্বর থেকে ডিজিটাল মুদ্রা বাজারে ছেড়েছে। প্রাথমিকভাবে এই মুদ্রা শুধু পাইকারি পর্যায়ে বা এজেন্টেদের মধ্যে লেনদেন হবে। এ প্রক্রিয়া সফল হলে এর লেনদেনের পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও ডিজিটাল মুদ্রা বাজারে ছাড়ার জন্য সমীক্ষা করছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভারত ও চীনের ডিজিটাল মুদ্রার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
সূত্র জানায়, বাজারে প্রচলিত মুদ্রার মান অনুযায়ীই ওইসব ডিজিটাল মুদ্রা লেনদেন হচ্ছে। বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিনিময় হার ডলার বা বিকল্প অন্য কোনো মুদ্রার সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে একে রিয়েল এক্সচেঞ্জ রেট বা প্রকৃতি বিনিময় হারের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
বাংলাদেশের যেসব দেশের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য রয়েছে ওইসব দেশের সার্বিক অর্থনীতির সূচকগুলোর সঙ্গে বিশ্লেষণ করে প্রকৃত বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়। ফলে এই মুদ্রাটি ডলারের বিকল্প হিসাবে যে কোনো মুদ্রায় লেনদেন করা যাবে।
এদিকে টাকায় ২ জানুয়ারি প্রতি বিটকয়েনের দাম ছিল ১৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ২১ জানুয়ারি তা বেড়ে ২২ লাখ ২৪ হাজার টাকায় উঠেছে। ডিসেম্বরে এর দাম সর্বনিম্ন ১৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকায় নেমেছিল। ২০২১ সালের নভেম্বরে এর দাম সর্বোচ্চ ৫২ লাখ টাকায় উঠেছিল।
২০০৯ সালে প্রতি বিটকয়েনের দাম ছিল ১ ডলার। ২০১৯ সালের নভেম্বর তা বেড়ে ১১ হাজার ৩৭০ ডলারে উঠে। ২০২০ সালে মার্চে আবার কমে ৫ হাজার ১৬৫ ডলারে নামে। ২০২১ সালের নভেম্বরে এর দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার ৪০০ ডলারে উঠে। এরপর থেকে কমতে শুরু করে। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা কমে সর্বনিম্ন ১৬ হাজার ৫২৯ ডলারে নেমেছে। গত ১৪ মাসে এর দাম প্রায় চারগুণ কমেছে। অর্থাৎ ৪৭ হাজার ৮৭১ ডলার। তবে ২ জানুয়ারি থেকে এর দাম বাড়তে শুরু করেছে। শনিবার পর্যন্ত এর দাম বেড়ে ২৩ হাজার ২৫ ডলার হয়েছে। গত ২০ দিনে এর দাম বেড়েছে ৬ হাজার ৪৯৬ ডলার বা প্রায় ৪০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে বিটকয়েনের লেনদেন নিষিদ্ধ। তারপরও ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কতিপয় ব্যক্তি এর মাধ্যমে লেনদেন করছেন। একই সঙ্গে অনলাইন জুয়ার দেনা-পাওয়া সম্পন্ন করার জন্যও এ কয়েন ব্যবহৃত হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বেশকিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।
বিটকয়েনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। ফলে এতে বিনিয়োগ করে বা লেনদেন করে কেউ প্রতারিত হলে কোনো সংস্থার কাছে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া এর মাধ্যমে লেনদেন করা বা এতে বিনিয়োগ করাও একটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন বিষয়ক অপরাধ।
এদিকে আইএমএফ’র প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বিটকয়েনে যারা বিনিয়োগ করেছেন তাদের প্রায় সবাই ব্যাপকভাবে পুঁজি হারিয়েছেন। স্বর্ণ, শেয়ার ব্যবসা, বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যারা বিনিয়োগ করেছেন তাদের পুঁজির মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে স্বর্ণে বিনিয়োগকারীদের। এরপরেই রয়েছে ডলারে বিনিয়োগকারীদের অবস্থান।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীরা। তবে ইউরো ও পাউন্ডে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা বেশ কম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিটকেয়েনের দাম যেভাবে কমছিল, তাতে আর্থিক খাতে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে গিয়েছিল। কেননা বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিটকয়েন ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে বিটকয়েন অন্যতম একটি উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরাও আন্তর্জাতিক লেনদেন করার জন্য বিটকয়েনে আগাম বুকিং দিয়ে রাখছেন।