Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন

‘হাতপাখায়’ নজর বড় দুদলের

ইতোমধ্যে ভোটের রাজনীতিতে নিজেদের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ * ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি

Icon

শেখ মামুনুর রশীদ

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘হাতপাখায়’ নজর বড় দুদলের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সমমনা শরিক দলের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

ডান-বামসহ নানা ঘরানার পুরোনো শরিকদের সঙ্গে রাখার পাশাপাশি নতুন সুহৃদ খুঁজতে ইসলামী দলগুলোর দিকেও ঝুঁকতে শুরু করেছে তারা। এ ক্ষেত্রে দুই প্রধান দলেরই প্রথম পছন্দ চরমোনাই শরিফের পীর মুফতি মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে তেমন একটা আশানুরূপ সফলতা অর্জন না করলেও সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বেশ চমক দেখিয়েছে এই দলটি।

দলীয় প্রতীক ‘হাতপাখা’ নিয়ে ইসলামি ঘরানা এই দলটি ইতোমধ্যে দেশের ভোটের রাজনীতিতে নিজেদের একটি শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করার কথা জানান দিয়েছে। যা ভাবিয়ে তুলেছে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোকে। এ কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই বড় দলেরই নজর এখন হাতপাখার দিকে।

তবে আপাতত কোনা জোটে নয়, নিজস্ব অবস্থানে থেকেই এগিয়ে যেতে চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে শনিবার যুগান্তরকে দলটির আমির চরমোনাই পীর মুফতি মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের নির্বাচনি সমঝোতায় যাওয়ার কথা ভাবছি না। আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথাও ভাবছি।

জানা গেছে, ইসলামি মোর্চা হিসাবে ১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। ১৯৯০ সালের দিকে চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে মোর্চাটি চরমোনাই শরিফের প্রয়াত পীর মুফতি মাওলানা ফজলুল করীমের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

নির্বাচন কমিশনে ২০০৮ সালে নিবন্ধনের সময় দলটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’। বর্তমানে এই দলের আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন চরমোনাই শরিফের প্রয়াত পীর মুফতি মাওলানা ফজলুল করীমের ছেলে মুফতি মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। মুফতি মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের আরেক ভাই মুফতি মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল করীম দলটির একনম্বর নায়েবে আমির।

ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতাদের দাবি, দেশের ৮৭টি সাংগঠনিক জেলা, ৬৯১টি উপজেলা, ১১৯টি সিটি থানা, ৬১টি সদর পৌরসভা, তিন হাজার ৫১৯টি ইউনিয়ন এবং ১২ হাজার ৬৭০টি ওয়ার্ডে ইসলামী আন্দোলনের কমিটি রয়েছে।

এমনকি দলটি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তাদের কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া দেশের ৯টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সারা দেশে তাদের নির্বাচিত ইউপি সদস্য রয়েছেন ১৮৬ জন। এর বাইরে রাজধানী ঢাকার ডেমরায় হাজি ইব্রাহিম কাউন্সিলরসহ সারা দেশে সাতজন নির্বাচিত কাউন্সিলর রয়েছেন দলটির।

এর বাইরে ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে ছিল। ঢাকা উত্তরে দলটি পেয়েছিল ১৮ হাজার ভোট এবং দক্ষিণে ছিল ১৫ হাজার ভোট।

২০২০ সালে এসে ভোট বেড়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৬ হাজার ২৫৮ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৬ হাজার ৫২৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছে দলটি। ২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তৃতীয় হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে ছিল তারা। রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছিল ইসলামী ঘরানার এই দলটি।

একইভাবে ২০১৭ সালে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘হাতপাখা’ প্রতীকে মেয়র পদে ভোট করেছিলেন গোলাম মোস্তফা বাবু। তিনি ২৪ হাজার ৩ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জয়ী হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী দ্বিতীয় ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তৃতীয় হয়েছিলেন। গত ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলটির হয়ে আমিরুজ্জামান পিয়াল নির্বাচন করেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার এবারও মেয়র নির্বাচিত হন। বিএনপি ভোটে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তৃতীয় হন এই নির্বাচনে। আর নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মূল প্রার্থী জামানত হারান।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও হাতপাখার ভোট বেড়েই চলছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এককভাবে ১৬০টি আসনে অংশ নেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ওই নির্বাচনে দলটি ১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট অর্থাৎ ছয় লাখ ৫৮ হাজার ২৫৪ ভোট পায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব আসনেই প্রার্থী দিয়ে আলোচনায় আসে ধর্মভিত্তিক এই দলটি। ওই নির্বাচনে একটি আসনে তাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়। ভোটগ্রহণের দিন নানা অনিয়মের অভিযোগে একপর্যায়ে ফলাফল বর্জনের ঘোষণা দিলেও প্রায় ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ ভোট পড়ে দলটির বাক্সে। অর্থাৎ প্রায় ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৩ ভোট পায় হাতপাখা প্রতীক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশের ১৪ বছরের মাথায় এসে ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলটির ভোটের রাজনীতিতে উত্থান রীতিমতো বিস্ময়কর। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে রেকর্ড পরিমাণ ভোট রাজনৈতিক মহলের আলোচনায় এনে দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলটির এমন অবস্থান মনোযোগ কাড়ছে বড় দলগুলোর। ভোট ব্যাংকের সমীকরণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি-সবাই তাদের কাছে টানার উদ্যোগ নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল এবং উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে পঞ্চগড়, দিনাজপুর, লালমনিরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতে দলটির ভক্ত বা সমর্থক সংখ্যা বেশি। রাজধানী ঢাকায়ও তাদের কার্যক্রম বেশ শক্ত।

রামপুরায় জামিয়া মহিলা মাদ্রাসা, ভাটরায় সাইদিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসা, জুরাইন ও যাত্রাবাড়ীর বেশির ভাগ কওমি মাদ্রাসায় তাদের কর্মী ও সমর্থক রয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা একমঞ্চে আসেন। তারা সবাই ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন। এর পর থেকেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। চলছে কাছে টানার জন্য দেনদরবার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম