পরিস্থিতি বুঝে কঠোর কর্মসূচি দেবে বিএনপি
তারিকুল ইসলাম
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো মাঠ গরম করছে। যুগপৎ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মতো জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে আপাতত আরও কর্মসূচি দেবে।
শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য ইতোমধ্যে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিক এসব কর্মসূচি পালন করে মোক্ষম সময়ে আন্দোলনের গতি বাড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে চান দলের নেতারা।
এজন্য মার্চ অথবা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরকে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য বেছে নেওয়া হতে পারে। ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ ও রোডমার্চ, ঢাকায় গণঅবস্থান, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচির ব্যাপারে বিএনপিতে আলোচনা চলছে। বিএনপি সূত্র জানা গেছে এসব তথ্য।
সমমনা দলগুলোকে নিয়ে অহিংস পথেই যুগপৎ আন্দোলন এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারাও একাধিকবার বলেছেন, তারা সরকারের উসকানিতে পা দেবেন না। বরং গণমানুষকে সম্পৃক্ত করে, অহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার পতনের আন্দোলন এগিয়ে নেবেন। নীতিনির্ধারকরা জানান, দলের ভেতরে একটি বড় অংশ হরতাল, অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে।
তবে নানা দিক পর্যালোচনা করে সেদিকে না যাওয়ার ব্যপারে মত দিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারা মনে করছেন, গত বছর ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় গণসমাবেশের পর এখন পর্যন্ত বিএনপির সব কর্মসূচি প্রশংসা পেয়েছে। সরকার নানাভাবে উসকানি দেওয়ার পরও সে ফাঁদে পা দেওয়া হয়নি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের জন্য বিদেশি শক্তিগুলোও প্রশংসা করছে। তাই রাজনীতির মাঠে এ সুনাম ধরে রেখে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনেও ব্যতিক্রমী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়া হবে। আর তা ঢাকামুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, দলের বিভিন্ন ফোরাম এবং লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আলোচনায় এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে কথা হয়েছে। দলের নেতারা মনে করেন, এ ধরনের কর্মসূচি এখন হরতাল-অবরোধের চেয়ে বেশি কার্যকর। এসব কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা বেশি থাকে। ঢাকামুখী কোনো কর্মসূচি ঘোষণা হলে সরকারের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। সরকারই হরতালের মতো আবহ তৈরি করে।
কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, ঠিক কবে এ কর্মসূচি দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি একটি মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় আছে। অবশ্য, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মার্চের মধ্যে একটি বড় আন্দোলন করতে চান। পরিস্থিতি তৈরি হলে মাসখানেকের মধ্যে এ ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে। মার্চে সম্ভব না হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে গিয়ে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে পারে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকেও ধারাবাহিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। তবে পরিস্থিতি বুঝে হঠাৎ ঢাকামুখী বড় ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে।
সূত্র জানায়, ঢাকামুখী লংমার্চ ও রোডমার্চ, ঢাকায় গণঅবস্থান, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও-এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি আলোচনা করছে। যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো থেকেও একই ধরনের প্রস্তাব পেয়েছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। তবে এবার এসব কর্মসূচি ঢাকামুখী করার প্রস্তাব এসেছে।
নীতিনির্ধারকদের মতে, সরকার ঢাকামুখী যে কোনো কর্মসূচিতে ভীত হয়ে ওঠে। ফলে আন্দোলনে যে গতি তৈরি হয়, তাতে নেতাকর্মী ও জনগণের অংশগ্রহণ অনেক বেড়ে যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, মঙ্গলবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যুগপৎ কর্মসূচির দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার বিষয়টি ওঠে। একইদিন সরকারি দলের এ কর্মসূচিকে নেতারা ‘উসকানিমূলক’ বলে মনে করছেন। তাই এর প্রতিবাদেও কর্মসূচি পালনের বিষয়ে মত দেন তারা।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আগস্ট থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উসকানি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে ফাঁদে নেতাকর্মীরা পা দেননি, ভবিষ্যতেও দেবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাব। ধারাবাহিক কর্মসূচি চলতে থাকবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যতিক্রমী নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি আসবে, যাতে জনগণের অংশগ্রহণে জোয়ার তৈরি হবে। এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটানো হবে।
আন্দোলনরত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য ইতোমধ্যে সাত সদস্যের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এ লিয়াজোঁ কমিটিতে না থাকলেও মূলত সব বিষয় দেখভাল করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তার সঙ্গে ইতোমধ্যে সাক্ষাৎ করেছেন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট নেতারা।
বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী দিনের কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠন এবং পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করলেও ‘চুপ’ থাকার কৌশল নিয়েছে। এখন থেকে নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও গুলি ছোড়া হলে তা প্রমাণ হিসাবে ভিডিও ধারণসহ নানা পদক্ষেপ নেবে বিএনপি। পরে তা গণমাধ্যম ও বিভিন্ন দূতাবাস এবং সংস্থার কাছে তুলে ধরা হবে। এটি করে বিএনপি আরও প্রমাণ করতে চাইবে, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। বিএনপি কোনো সন্ত্রাস করে না।