শিল্পীদের বিভক্তিতে নাটকপাড়ায় অস্থিরতা
কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা
তারা ঝিলমিল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় আসে ৫ আগস্ট। এরই মধ্যে পার হয়ে গেল প্রায় দেড় মাস। আন্দোলনের সময় থেকেই শোবিজ অঙ্গন স্থবির। এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি নাটক সিনেমার শুটিং। তবে এ আন্দোলন কেন্দ্র করে শিল্পীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিভাজন। দুভাগে বিভক্ত হয়েছেন শিল্পীরা। আওয়ামী ঘনিষ্ঠ শিল্পীরা সরকারের পক্ষে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন। তাদের এ কর্মকাণ্ডে লজ্জিত সচেতন শিল্পী সমাজ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও শিল্পীদের বিভক্তির কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছে নাটকপাড়ায়। দুপক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। চলছে সামাজিক মাধ্যমে কাদা ছোড়াছুড়ির মতো ঘটনা। আওয়ামী সরকারের তোষামোদি করা শিল্পীরা এখনো নিজেদের সাধু বানাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে ভোল পালটে বর্তমান সরকারের লোক হয়ে উঠার চেষ্টায় লিপ্ত। ছাত্রদের বিরোধিতা করা ছাড়াও নাটকের শিল্পীদের সংগঠন অভিনয় শিল্পী সংঘ ও সিনেমার অনেক শিল্পীর নামে উঠছে নানা অভিযোগ। ভাইরাল হওয়া ‘আলো আসবেই’ গ্রুপ নিয়েও প্রশ্নের মুখে অনেক শিল্পী। এদিকে অভিনয় শিল্পী সংঘের সংস্কার চেয়ে সভা-সমাবেশ করছেন সংস্কারকামী শিল্পীরা। দুপক্ষের এ বিভাজনের কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছে নাটকপাড়ায়। অনেক শিল্পীই কাজে ফিরতে পারছেন না। ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়।
শিল্পীদের রাজনীতিতে জড়ানো প্রসঙ্গেও প্রশ্নবিদ্ধ হন অনেকে। সংশ্লিষ্টরা অনেকেই রাজনীতির ব্যাপারটিতে সায় দিলেও দলকানা হওয়ার বিষয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছেন। শিল্পীরা ন্যায়ের পক্ষে কথা বলবেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন, এমনটাই হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা। শিল্পীদের মধ্যে বৈষম্য ও বিভাজন নিয়ে নানা বিতর্ক ও প্রশ্ন আজ সরগরম মিডিয়া। আর তার প্রভাব পড়ছে শিল্পে, ক্ষতির মুখে পড়ছে টিভি নাটক ও অনলাইন কন্টেন্টগুলো।
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত অভিনেতা ও নির্মাতা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি শিল্পীদের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন লক্ষ করছি, যেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এটা কীভাবে সমাধান হবে, সেটাই বুঝতে পারছি না। শিল্পীদের মধ্যে আর বিভাজন সৃষ্টি করা উচিত নয়।’
এ সমস্যা দূরীকরণে বয়োজ্যেষ্ঠরা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নে এ নাট্যব্যক্তিত্ব বলেন, ‘সবার নিজস্ব একটা রাজনৈতিক দর্শন বা আদর্শ আছে। কিন্তু অনেকেই অতিরিক্ত প্রকাশ করছেন যা একেবারেই অনুচিত। আমি এ ব্যাপারটি নিয়ে অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি। কিন্তু এখানে সবাই তাদের মতো করে যুক্তি উপস্থাপন করছে। এখন এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, নিজের মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলছি। গণতান্ত্রিক দেশে নিজের মতামত সবাই প্রকাশ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো কিছুই তো নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত করা মঙ্গলজনক হবে না।’
প্রসঙ্গটি নিয়ে কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, ‘শিল্পীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ ভুল করে থাকে তাদের শোধরানোর সুযোগ দিন। যারা সংস্কার চাইছেন তাদের নিয়েও বসুন। ভালো খারাপ থাকবেই। আলোচনা-সমালোচনাও হবে। এগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করা কাম্য নয়। বসুন, আলাপ করুন, সমাধান আসবেই। এসব বিতর্কে না জড়িয়ে সবাইকে নাটকের ভালোর বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। তা নাহলে, আমাদের সমৃদ্ধ নাট্যশিল্প হারিয়ে যাবে।’
নাট্যব্যক্তিত্ব তারিক আনাম খান বলেন, ‘শিল্পীরা আজ দুভাগে বিভক্ত, এটা একেবারেই ভালো লাগছে না। আমি বলব তারা যেন ততটা শত্রুতার মধ্যে না যায়, যেখান থেকে ফেরার কোনো পথ থাকে না। আমি দুই গ্রুপের সঙ্গেই কথা বলেছি। শিল্পী সংঘের বর্তমান যে কমিটি আছে তাদের কাছে সংস্কারকামী অভিনয় শিল্পীরা সংস্কার চাইছে সেগুলো মেনে নেওয়া হোক। আমি উভয়কেই বলেছি এ বিবাদ-বিভাজন ঠিক নয়।’
প্রখ্যাত অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেন, ‘এমনিতেই নাটক নিয়ে আমাদের আরও অনেক সতর্ক থাকা উচিত। এর মধ্যে যদি শিল্পীরা বিভাজনে ব্যস্ত থাকেন তাতে সাধারণ মানুষের কাছে শিল্পীদের যে ইমেজ ও সম্মান ছিল তার কোনোটাই আর থাকবে না। কারণ, এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সব কিছুই প্রচার হচ্ছে। দর্শক তার ফোনেই সবার কর্মকাণ্ড দেখছেন। কিছুই গোপন থাকছে না। আমি বলব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাধানে আসা উচিত।’