Logo
Logo
×

ফিচার

কিডনি ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত থাকুন

Icon

অধ্যাপক (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) ডা. এসএম শামীম ওয়াহিদ

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কিডনি ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত থাকুন

কিডনি ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত থাকুন

কিডনি রক্ত পরিশুদ্ধ করে, রক্তের মধ্যে থাকা নানা উপাদানের সঠিক মাত্রা বজায় রাখে, শরীর থেকে দূষিত ও অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের করে দেয়, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হাড়ের স্বাস্থ্যরক্ষা ও রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করাসহ বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তবে কিডনির কিছু কোষ কখনো কখনো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে টিউমারে রূপ নেয়। টিউমার পরবর্তী সময়ে কিডনির বেশির ভাগ অংশে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে এ ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। এ টিউমারই হচ্ছে কিডনি ক্যানসার বা রেনাল ক্যানসার। সাধারণত ধূমপান, স্থূলত্ব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, উচ্চরক্তচাপ, এসবেস্টাস, ক্যাডমিয়ামের সংস্পর্শে থাকা এবং ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত খাবার গ্রহণকারীদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া ডায়ালাইসিস রোগী, নিয়মিত ব্যথা নিরোধক ওষুধ ও ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ সেবনসহ যাদের পরিবারে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে তাদেরও কিডনি ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে।

* উপসর্গ

প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণত কিডনি ক্যানসারের তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে টিউমার বড় হয়ে গেলে বা শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়লে কোমরে ব্যথা, প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া, জ্বর, ওজন হ্রাস, রক্তশূন্যতা, খাবারে অরুচি, দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গগুলো দেখা দেয়।

* রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করলে এ কিডনি ক্যানসারের অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব। এছাড়া সিটিস্ক্যান পরীক্ষাও করা হয়। রোগ শনাক্ত হলে সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হলো অপারেশন করে ক্যানসারের সেলগুলোসহ টিউমারটি ফেলে দেওয়া। ক্যানসারটি মূলত কিছুটা ছোট থাকলে কিডনি না ফেলে শুধু ক্যানসারটির অপসারণ সম্ভব। তবে কখনো কখনো পুরো কিডনি অপসারণের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া কোনো রোগী অপারেশনের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত না হলে তাদের এসবিআরটি, আরএফএ ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া কিডনি ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে প্রয়োজনে কিডনি অপসারণের পাশাপাশি ইমিউনোথেরাপি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপিসহ অন্যান্য সাপোর্টিভ থেরাপির প্রয়োজন হয়।

* প্রতিরোধের উপায়

কিডনি ক্যানসার প্রতিরোধ করতে হলে প্রথমেই জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে। ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং অস্বাস্থ্যকর ও জাঙ্কফুড পরিহার করতে হবে, ব্যথা নিরোধক ও ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ সেবন বন্ধ করাসহ কেমিক্যালযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। যাদের পরিবারে কিডনি ক্যানসারসহ অন্যান্য ক্যানসারের ইতিহাস আছে তাদের নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সচেতন থাকতে হবে। যাতে করে এ রোগ প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করে চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা যায়।

* কিডনি সুস্থ রাখতে করণীয়

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কিডনির কার্যক্ষমতা কমে আসতে থাকে। তাই কিডনিকে সুরক্ষিত রাখতে সচেতন থাকতে হবে। একই সঙ্গে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ব্যথার ওষুধ, এন্টিবায়োটিকস ও ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা যাবে না। এছাড়া, ডিহাইড্রেশন ও ওভারহাইড্রেশন পরিহার করলে, টক্সিক কেমিক্যালযুক্ত খাবার এড়িয়ে চললে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে কিডনিকে সুরক্ষিত রাখা যায়।

লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট, ইউরোলজি বিভাগ, এভারকেয়ার হসপিটাল, ঢাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম