
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১০ পিএম

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা ও সততার বিষয়টি অনেককাল আগে থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ। আরও অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ সরকারবিরোধী মত দমনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের এ চরিত্র আরও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল। সরকারবিরোধী আন্দোলনকে দমন করার এক চরম নিষ্ঠুর ভূমিকায় নেমেছিল একশ্রেণির পুলিশ।
দেশের পুলিশবাহিনীর কার্যপ্রণালি কেমন হওয়া উচিত, এটা এক বড় প্রশ্ন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এ ব্যাপারে অনেকের চোখ খুলে গেছে। পুলিশবাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও নতুন চেতনা দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটেই পুলিশের জন্য তৈরি করা হয়েছে এই বাহিনীর নতুন আচরণবিধি। এই আচরণবিধিতে থাকছে কোড অফ এথিক্স অর্থাৎ নৈতিক নিয়মাবলি; থাকছে সততার শিক্ষা, দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের উপায়। আরও থাকছে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, বেআইনি আটক, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে গণমুখী নির্দেশনা। পুলিশের আচরণবিধিসংক্রান্ত একটি খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি করেছে পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট। এই ইউনিটের পক্ষ থেকে খসড়া আচরণবিধিটি পুলিশ সদর দপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর এটি প্রকাশ ও কার্যকর করা হবে বলে জানা গেছে।
আমরা মনে করি, পুলিশের আচরণবিধি নির্দিষ্ট করার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। এই বিধির মাধ্যমে পুলিশের পেশাগত উৎকর্ষই শুধু সাধিত হবে না, পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও পুনরুদ্ধারেও তা সহায়ক হবে। আমাদের পুলিশবাহিনী পরিচালিত হচ্ছে মূলত ব্রিটিশ আমলের আইন দ্বারা। আমরা এখন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিবাসী। ঔপনিবেশিক আমলের আইন দ্বারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারে না। পুলিশ যাতে সরকারের রাজনৈতিক কিংবা বিশেষ মহলের স্বার্থের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে অবশ্যই। স্বীকার করতেই হবে, সমাজে পুলিশের ভাবমূর্তি খুব ভালো নয়। অভিযোগ রয়েছে, জনগণের সেবা করার পরিবর্তে অনেক সময় পুলিশ তাদের হয়রানি করে থাকে। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুরও ঘটনা রয়েছে অনেক। এসব অভিযোগ থেকে পুলিশকে মুক্ত করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর জনগণ যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, একটি সৎ, দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ পুলিশ বাহিনী ছাড়া সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়ার নয়। তাই পুলিশের শুধু পোশাক বা লোগো পরিবর্তন নয়, পুলিশকে সামগ্রিকভাবে একটি গণমুখী বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।