
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২০ পিএম
মার্কিন শুল্ক ইস্যু: সংকট নয় সম্ভাবনায় রূপান্তর হোক

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপ করেছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপরই শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প। এ অবস্থায় দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে এনে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে নতুন শুল্ক আরোপ নিয়ে দেশটির প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ চলছে। দু-একদিনের মধ্যে অগ্রগতিও জানা যাবে বলে সরকার আশা করছে। শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টিকে আতঙ্কের পরিবর্তে বরং সম্ভাবনা হিসাবেই দেখছে সরকার।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ওপর নতুন করে ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়। তবে দেশটির বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ এবং কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এ ছাড়া ভারতের ওপর ২৬, চীন ৩৪, পাকিস্তান ২৯, শ্রীলংকা ৪৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। মূলত যে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বেশি, সে দেশের ওপরই বেশি হারে শুল্ক আরোপ হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পালটা শুল্ক আরোপ করেছে চীন ও প্রতিবেশী কানাডা। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করণীয় নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
ভুলে গেলে চলবে না, প্রতিটি প্রতিকূল পরিস্থিতির একটা বিপরীত ইতিবাচক সম্ভাবনা থাকে। আমাদের সেই ইতিবাচক সম্ভাবনার ক্ষেত্রে অধিকমাত্রায় আশাবাদী হওয়ার কারণ এজন্যই রয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ। যার পরামর্শ বিশ্ব অর্থনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রধান উপদেষ্টার দক্ষ নেতৃত্ব ও কার্যকর উদ্যোগ দেশের রপ্তানিকারকদের দুশ্চিন্তা প্রশমন করবে বলেই মনে করি আমরা। মনে রাখা দরকার, এমনিতেই দেশের তৈরি পোশাক খাত নানা সংকট মোকাবিলা করে চলেছে। তার ওপর এমন মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক আরোপ হলে, এ খাত যে বিপদে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য। আশার কথা, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের বিষয়টি আগে থেকেই জানা থাকায় ফেব্রুয়ারির শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে বৈঠক করতে বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। সে অনুযায়ী তখন থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, ট্রেড ও এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টসহ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বস্তরের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। খোদ মার্কিন প্রশাসনই জানিয়েছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশই সবার আগে যোগাযোগ করেছে। কীভাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে এনে প্রতিযোগী দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশকে নেওয়া যায়, সরকারের মূল লক্ষ্য সেটিই। সে ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বৃদ্ধি, মার্কিন পণ্যের শুল্ককর কমানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে সরকার কাজও শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের গতিশীল কূটনৈতিক যোগাযোগের যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে উচ্চতর পর্যায়ে আলোচনা ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক হ্রাসসহ রফতানি পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব এবং বাণিজ্যিক অংশীদারত্বের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকার এ সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করবে, এটাই প্রত্যাশা।