
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১২ পিএম

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
দীর্ঘ পনেরো বছর পর ফ্যাসিবাদী শাসনমুক্ত পরিবেশে এবার দেশের মানুষ স্বস্তিতে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে পেরেছে। গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, দেশের মানুষ এখন তার সুফল ভোগ করছে। জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের পর দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রেখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি তার বক্তব্যে সব বাধা অতিক্রম করে ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসাবে নতুন বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। বস্তুত এবারের ঈদে সারা দেশের মানুষ যতটা স্বস্তি পেয়েছে, তা ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। ঈদের ছুটিতে রাজধানী অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেলেও গ্রামাঞ্চলে জনজীবন হয়ে উঠেছিল উৎসবমুখর। ঈদে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে যে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা জোরদার করা কঠিন নয়, সেটা আবারও প্রমাণিত হলো।
এবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরোনো বাণিজ্যমেলার মাঠে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছিল ঈদুল ফিতরের নামাজ। ঈদের জামাত শেষে আনন্দ মিছিল এক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মিছিলটি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে অংশগ্রহণকারী অনেকে সমবেত কণ্ঠে গেয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ঈদুল ফিতরের কালজয়ী গান-‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। নানা রঙের পতাকা নিয়ে অনেকে সারিবদ্ধভাবে ঘোড়ার পীঠে সওয়ার হয়ে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেছেন। বাদক দলের অংশগ্রহণ র্যালিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিল। গত পনেরো বছর রাজধানীতে ঈদুল ফিতরের দিনে এমন আনন্দময় র্যালির কথা মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি।
ঈদের ছুটি শেষে কর্মজীবীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। ঈদের পর রাজধানীমুখী ঈদযাত্রায় ফিরতি ট্রেন, লঞ্চ ও বাসে যাত্রীর তেমন চাপ নেই। ফলে অনেকটা স্বস্তিতেই ঢাকায় ফিরছে মানুষ। এবার সড়কপথে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি কম হয়েছে। অতীতের মতো রেলের শিডিউল বিপর্যয়ও দেখা দেয়নি এবার। নৌপথেও ঘটেনি কোনো দুর্ঘটনা। তবে সড়কপথে এবারও দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। স্কুল ছুটি থাকায় অনেকে পরিবারকে রেখে একাই ঢাকা ফিরছেন। ঈদের আগে যারা বাড়ি যেতে পারেননি, তাদের অনেকে এখন ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন। গত দুদিন রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ স্টেশন এবং আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকতের সবকটি পয়েন্ট ছিল লোকেলোকারণ্য। অনেকদিন পর কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল দেখে স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় হোটেল-মোটেলসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এবারের ঈদে বহু পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা সৈকতও। ঈদের ছুটিতে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতেও পর্যটকদের আনাগোনা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। আশা করা যায়, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। এ খাতে আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে। এবার ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে বৈধপথে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রবাসীদের বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করা হলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে নিশ্চয়ই।