বিটিআরসিতেও ফ্যাসিস্টের দোসর : ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব কেন?

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
গত সরকারের পতনের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এখনো রয়ে গেছে আওয়ামীপন্থিদের দখলে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, দলীয় পরিচয়ে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শতাধিক কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থাকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। বস্তুত এসব কর্মকর্তা এখনো ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলছেন বলেই প্রকৃত সেবা পাচ্ছেন না দেশবাসী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিটিআরসিতে বেশির ভাগ ব্যক্তির নিয়োগ প্রক্রিয়াই ছিল অবৈধ। প্রচলিত নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে মূলত দলীয় পরিচয় ও আওয়ামী মন্ত্রী-এমপিদের সুপারিশকে প্রাধান্য দিয়েই এসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এভাবেই বিটিআরসিকে গড়ে তোলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের মিনি কার্যালয় হিসাবে। অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব আওয়ামীদলীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অডিট রিপোর্ট দেয় টেলিযোগাযোগ, বিজ্ঞান, তথ্য এবং প্রযুক্তি (পিটিএসটি) অডিট অধিদপ্তর। এ রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্তরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো কেবল জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়ে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের পরিচয়ে বিটিআরসিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়েছেন, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকেরই নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা।
বিটিআরসির প্রশাসন বিভাগের পরিচালক এমএ তালেব হোসেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের আত্মীয়। তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পদোন্নতিও বাগিয়েছেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সুপারিশে প্রশাসন বিভাগে সহকারী পরিচালক হিসাবে নিয়োগ পান তৌহিদুন নাহার, তিনি বর্তমানে উপপরিচালক। শেখ হাসিনার কন্যার সুপারিশে স্পেকট্রাম বিভাগে সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ পান সামিরা তাবাসসুম। বর্তমানে তিনি অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের উপপরিচালক। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের সুপারিশে নিয়োগ পান প্রশাসন বিভাগে কর্মরত উপপরিচালক মো. মিরাজুল ইসলাম। বিটিআরসিতে এমন আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশে।
এ সংস্থায় অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত শতাধিক কর্মী এতটাই সংঘবদ্ধ যে, যখন যিনি এ সংস্থায় চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে আসেন-চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন সেই কমিশনকে জিম্মি করে ফেলেন অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরা। প্রশ্ন হলো, এ সংস্থায় অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তরা নানা অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছেন কী করে? অডিট অধিদপ্তরের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান কর্তৃপক্ষ এ সংস্থায় অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দেরি করছে কেন? সরকারের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের বিষয়ে সতর্ক থাকা।