Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সড়ক অবরোধের অবসান জরুরি

জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি আর নয়

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সড়ক অবরোধের অবসান জরুরি

রাজধানীর বনানীতে ট্রাকচাপায় এক নারী পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে তার সহকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়ক ৭ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখায় সোমবার তীব্র যানজটের ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। বলা যায়, স্থবির হয়ে পড়ে গোটা রাজধানী। যানজটের এ নগরীতে কোনো একটি রাস্তা বন্ধ হলেই এর প্রভাব পড়ে আশপাশের অন্য সব সড়কে। এক্ষেত্রেও হয়েছিল তা-ই।

তেজগাঁও, মগবাজার, বাংলামোটর, গুলশান, নতুনবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, হাতিরঝিল, ইসিবি চত্বর, মাটিকাটা, শ্যাওড়া, খিলক্ষেত, উত্তরা, বিমানবন্দর সড়কসহ রাজধানীর বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ছড়িয়ে পড়েছিল এর প্রভাব। এসব সড়কে দীর্ঘস্থায়ী যানজট সৃষ্টি হয়; কোথাও কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিল যানবাহন। ফলে এই রমজান মাসে যাত্রীদের, বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে যেসব রোগীকে জরুরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল, তাদের। প্রশ্ন হলো, সড়কে এমন অরাজকতা আর কতদিন চলবে? অবিলম্বে এ প্রবণতার অবসান প্রয়োজন।

দুর্ঘটনায় যে কারও মৃত্যুই দুঃখজনক এবং এজন্য নিকটজনের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হওয়া স্বাভাবিক। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার যে ব্যাপকতা, তা বন্ধ হওয়া জরুরি। তবে সড়ক অবরোধ যে এর সমাধান নয়, তা সবারই অনুধাবন করা উচিত। দেশে সড়ক পরিবহণ আইন আছে। এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোরের সঙ্গে তুলে ধরাই হলো এক্ষেত্রে সঠিক কর্মসূচি। আমরাও দেশে প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করি।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চাই কার্যকর পদক্ষেপ। তবে প্রতিবাদ হিসাবে এমন কোনো কর্মসূচি কাম্য নয়, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পেশাজীবী ও গোষ্ঠীকে তাদের নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। সেসব ক্ষেত্রেও যানজট সৃষ্টি হয়ে তা জনদুর্ভোগের কারণ হয়েছে। তাই আমরা মনে করি, সব পেশাজীবী ও গোষ্ঠীরই উচিত জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী যে কোনো কর্মসূচি পরিহার করা। বস্তুত কথায় কথায় সড়ক অবরোধের প্রবণতা থেকে সবারই সরে আসা উচিত। প্রত্যেকেরই বোঝা উচিত, এ প্রবণতা চলতে থাকলে আজ যারা অবরোধ করছেন, তারাও অথবা তাদের অসুস্থ বা বৃদ্ধ স্বজনরাও কখনো এমন দুর্ভোগের শিকার হতে পারেন।

সোমবার বনানীতে দুর্ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। পরে পুলিশ এসে শ্রমিকদের সড়ক ছেড়ে দিতে বারবার অনুরোধ করলেও, তা মানেননি বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। একপর্যায়ে ঘাতক চালককে গ্রেফতার, দুর্ঘটনার স্থানে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ এবং নিহত-আহতদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের আশ্বাসে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শ্রমিকরা। অথচ পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে এ প্রতিশ্রুতি দিলে মানুষের ভোগান্তি লাঘব হতে পারত। আমরা মনে করি, পুলিশ বাহিনীর এমন একটি ইউনিট থাকা উচিত, যারা কোথাও কোনো সড়ক দুর্ঘটনা বা অঘটন ঘটামাত্র ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে। বিশেষ করে জনদুর্ভোগের এই নগরীতে এ ধরনের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম