নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন
দেশের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, নবনির্মিত রামগড় স্থলবন্দর এবং ফেনী ইকোনমিক জোন চালু করা হলে তা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, এক গোপনীয় প্রতিবেদনে বিজিবি দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে রামগড় স্থলবন্দর এবং ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু না করার সুপারিশ করেছে। সম্প্রতি ওই প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, ওই দুই স্থাপনা চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর এবং ফেনী-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির চাপ বাড়বে। আর এ দুই স্থাপনায় যাতায়াতের সুযোগ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারসংক্রান্ত চুক্তি সংশোধনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।
এদিকে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রামগড় স্থলবন্দর নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। ওই প্রতিবেদন স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। এতে ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রামগড় স্থলবন্দরের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ স্থলবন্দর আপাতত চালু না করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ চিন্তা-ভাবনা করলেও জানা গেছে, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি এ বন্দর নিয়ে তদন্ত করছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, রামগড় স্থলবন্দর ও আসা-যাওয়ার মহাসড়ক নির্মাণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। তবে রামগড় স্থলবন্দর চালু না হলে সেখানে নির্মাণ করা স্থাপনা কাজে আসবে না।
উল্লেখ্য, পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় রামগড় স্থলবন্দরটি অবস্থিত। ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। এ স্থলবন্দরের বিপরীতে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন (এলসিএস)। মূলত ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারতীয় পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজের মাধ্যমে আসবে। এরপর সড়কপথে রামগড় স্থলবন্দর হয়ে তা ভারতে যাওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণ করা হয়েছে। এ দুই স্থাপনা চালু হলে সুবিধার পাশাপাশি এ দেশে কী ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে, তা আগে খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি আমরা। রামগড় স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসীরা অবৈধ পথের পাশাপাশি বৈধ পথে যাতায়াতের সুবিধা পাবে কিনা, সেটিও অনুসন্ধানের দাবি রাখে। ভুলে গেলে চলবে না, সবার আগে দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। চট্টগ্রাম-রামগড় রাস্তা দিয়ে ভারতীয় যানবাহন চলাচলের সুযোগ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী জনগোষ্ঠী এই পথে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ বা প্রাপ্তির পরিকল্পনা যদি করে থাকে, তবে তা দেশের জন্য কতটা বিপজ্জনক হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিগত সরকার অপ্রয়োজনেও নানা মেগা প্রকল্পের কাজে হাত যে দিয়েছিল, তা আর অজানা নয়। তবে অর্থের অপচয়-দুর্নীতি এক বিষয় আর দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বকে ঝুঁকিতে ফেলা আরেক বিষয়। অন্তর্বর্তী সরকার স্থলবন্দরগুলোর বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।