Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

অভয়ারণ্যে যত হিংস্র প্রাণী

অপতৎপরতা রুখতে হবে ভারতকেই

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অভয়ারণ্যে যত হিংস্র প্রাণী

দেশে বর্তমানে যে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য চলছে, এর পেছনে রয়েছে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিয়ে থাকা গত ফ্যাসিস্ট সরকারের রাঘববোয়াল ও চুনোপুঁটিদের অপতৎপরতা। বস্তুত ভারত, বিশেষত কলকাতা এখন পলাতক ফ্যাসিস্টদের এক অভয়ারণ্য। ওসব জায়গায় নিরাপদে থেকেই তারা চালাচ্ছেন বিভিন্ন ঘুঁটি এবং এর ফলে দেশে তৈরি হচ্ছে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের নানা ঘটনা। দেশ হয়ে পড়ছে অস্থিতিশীল। দেশদ্রোহীরা ভারতের মাটিতে বসে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলার চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, ভাড়াটে কিলার, মাদক ব্যবসায়ী, সীমান্তবর্তী এলাকার চিহ্নিত স্মাগলার, বিভিন্ন চরমপন্থি গ্রুপের সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এক হিসাবে দেখা গেছে, ৫ আগস্টের পর পতিত শাসক দলের ৪৫ হাজার নেতাকর্মী ভারতে গেছেন। তাদের অধিকাংশই কলকাতায় অবস্থান করছেন। তারা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম, সিগন্যাল, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপসহ বিভিন্ন ডিজিটাল ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে দেশের সন্ত্রাসীদের উত্তেজিত করছেন। টাকাও ছিটাচ্ছেন দেদার। এসব পলাতক ফ্যাসিস্ট মনে করছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে পারলে তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। তাদের অপতৎপরতায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নিষিদ্ধ চরমপন্থি দলগুলো সক্রিয় হয়ে পড়েছে, পার্বত্য অঞ্চলের অস্থিরতার পেছনেও রয়েছে তাদের হাত। পুলিশ বাহিনী যে এখনো পুরোপুরি সক্রিয় হচ্ছে না, এর পেছনে গত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্ররোচনা রয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে তাদের শিরোমণি শেখ হাসিনারও যোগাযোগ রয়েছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এক কথায় বলা যেতে পারে, অপশক্তির নাটাই এখন ভারতে আর ঘুড়ি উড়ছে দেশে।

প্রথম কথা হচ্ছে, এই বিপুলসংখ্যক অপরাধী কীভাবে সীমানা অতিক্রম করে দেশের বাইরে যেতে পারল, এ এক বড় প্রশ্ন। আসলে ৫ আগস্টের অপরাহ্নের পর থেকে দেশের ছাত্র-জনতা বিজয়ানন্দে এতটাই বিহ্বল হয়ে পড়েছিল যে, এদিকটায় প্রয়োজনমতো নজর দেওয়া যায়নি। এই উদাসীনতায় তারা অর্থের বিনিময়ে সুযোগসন্ধানীদের দ্বারা সীমান্ত অতিক্রম করতে পেরেছে। কেউ হয়তো নিশ্চিত পরাজয় ভেবে ৫ আগস্টের অব্যবহিত আগেই দেশ ছেড়েছে।

এসব কার্যকারণ খোঁজার চেয়ে জরুরি বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় উদ্ভাবন করা। প্রথমত, আমাদের দেশের অপরাধীদের ভারতে অবস্থানের ইস্যুটি দিল্লিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। কোনো দেশে অন্য একটি দেশের অপরাধীরা অবস্থান করে যদি তাদের দেশকে অস্থিতিশীল করতে থাকে, তাহলে সেটাকে হালকাভাবে দেখার উপায় নেই। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থানকারী বাংলাদেশের অপরাধীদের একটা তালিকা প্রস্তুত করে ভারত সরকারকে তাদের ফেরত পাঠাতে তাগাদা দেওয়া জরুরি। বড় কথা, এদের অনেকেই এখানে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার আসামি। প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ভারত তাদের এদেশে পাঠাতে বাধ্য। দ্বিতীয় কথা, ভারতে অবস্থানরত ফ্যাসিস্টরা যেসব মাধ্যমে এদেশের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, সেসব মাধ্যমকে কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। কোন্ চ্যানেলে কত টাকা কার কাছে আসছে, তা উদ্ঘাটনেরও উপায় বের করতে হবে। সবশেষ কথা হলো, ভারতে অবস্থানরত মামলাভুক্ত আসামিদের দেশে ফেরত আনা না গেলে এবং ততদিন পর্যন্ত তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা না গেলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম