পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী দোসর
শুদ্ধি অভিযান কবে?

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে থাকার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মন্ত্রণালয় থেকে বিগত সরকারের অনেক দোসরকে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে। এসব নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, এটাই স্বাভাবিক।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে নানা পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন হলো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শুদ্ধি অভিযান কবে শুরু হবে? অভিযোগ রয়েছে, বিগত স্বৈরাচারের দোসররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখনো বহাল রয়েছেন। আমরা মনে করি, স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের এখনই সতর্ক হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কোনোরকম বিলম্ব কাম্য নয়। স্বৈরাচারের দোসরদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দেরি হলে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করতে অপচেষ্টা চালাতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে বর্তমান সরকার। কাজেই এ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিশ্ববাসীর বিশেষ কৌতূহল থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সরকার বর্তমানে যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করেছে, সেসব কাজের পরিধিসহ আনুষঙ্গিক বিষয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী ভূমিকা পালন করেছে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বজুড়ে ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। তার এ সুনাম সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশ উপকৃত হবে। এ সুযোগ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।
প্রশ্ন উঠেছে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়ে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ২৭তম পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে দায়িত্ব নেন তিনি। শেখ হাসিনার আমলে এ কর্মকর্তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রটোকল বিভাগে দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি দিল্লিতে তিন বছর, টোকিওতে তিন বছর, ইসলামাবাদে এক বছর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও তিনি দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি গ্রিস, কাতার ও চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
দিল্লিতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব কী ভূমিকা পালন করছেন, এটি খতিয়ে দেখা দরকার। আওয়ামী সরকারের সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির সুপারিশে টাকার বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত তার এলাকার প্রায় ৩০ কর্মচারী বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি করছেন বলে জানা যায়। পলাতক সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রাজশাহীর নিজের নির্বাচনি এলাকা থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রায় ৯০ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এসব কর্মীর কর্মকাণ্ড জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা দরকার। আওয়ামী লীগের দোসরদের অনেককে পররাষ্ট্র সচিব বঞ্চিত কর্মকর্তা হিসাবে অভিহিত করে সুপারিশ প্রণয়ন করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফ্যাসিস্ট আমলে তিনি জনপ্রশাসন পদকও পেয়েছেন। ওই সময়ে তিনি শেখ হাসিনার হাত থেকে এ পদক গ্রহণ করে তার প্রশংসা করে ব্যক্তিগত ফেসবুকে এ বিষয়ক একটি ছবি আপলোড করেছিলেন।
কট্টর আওয়ামী সমর্থকরাই তখন জনপ্রশাসক পদক পেতেন, এটি বহুল আলোচিত। এ প্রেক্ষাপটে বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব কতটা আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এসব বিষয় খতিয়ে দেখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অবিলম্বে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা উচিত বলে মনে করি আমরা।