সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো
এসব কী হচ্ছে ভেতরে?

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নাটকীয় কায়দায় তার পদত্যাগের কথা জানান। তিনি তার সিদ্ধান্তের পক্ষে বেশকিছু কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শিল্পকলার মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন অধ্যাপক জামিল আহমেদ। এর সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় তিনি সেই পদ ছাড়লেন। স্বাভাবিকভাবেই শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদত্যাগ দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নানা প্রশ্ন ও সমালোচনাও দেখা দিয়েছে। তবে এসব প্রশ্নের আগে শিল্পকলা একাডেমির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কেন গেল ৬/৭ মাসে কার্যকর ভূমিকায় আসতে পারেনি, সেই উত্তরও খোঁজা জরুরি।
জুলাই বিপ্লবের পর বাংলা একাডেমিতে যেমন সংস্কারের কোনো ছোঁয়া লাগতে আমরা দেখিনি, তেমনিভাবে শিল্পকলা একাডেমির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেও সংস্কারের ছোঁয়া দূরে থাক, নতুন পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ পরিলক্ষিত হয়নি। বরং আমরা দেখেছি, বাংলা একাডেমি থেকে এমন অনেকেই পুরস্কার পেয়েছেন, যারা সেই পুরস্কারের যোগ্য নন, ফ্যাসিবাদের দোসর হওয়ার ফলেই তারা পুরস্কৃত হয়েছেন। বস্তুত, গেল ১৬ বছরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কীভাবে অকার্যকর হয়েছিল, তা আমাদের অজানা নয়। দেশের শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে কোনো বড় ধরনের গবেষণা কিংবা এর প্রচার-প্রসার নিয়ে যথেষ্ট কাজ করার প্রয়োজন থাকলেও তা করা হয়নি। আমাদের বিশ্বাস ছিল, গত রেজিমের পতনের পর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়াধীন সব প্রতিষ্ঠানই নতুন করে পথচলা শুরু করবে। স্থবিরতা কাটিয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেবে। জুলাই বিপ্লবের মতো দেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নিয়েও শিল্পকলা একাডেমি বেশকিছু সময়োপযোগী কার্যক্রম হাতে নেবে, এমন প্রত্যাশাও আমাদের ছিল। কিন্তু গত ৬ মাস শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম আমাদের হতাশ করেছে। একইসঙ্গে বিগত সরকারের আমলের মতো স্থবিরতার ধারাবাহিকতার রহস্য কী, মনে এমন প্রশ্নেরও উদয় হয়েছে। অনেকেই বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোয় গত সরকারের তোষামোদকারী ও সুবিধাভোগীরাই এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।
জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেই প্রয়োজনীয় রদবদল হয়নি। যদিও তা ছিল বহুল প্রত্যাশিত। বলা বাহুল্য, সেই পরিবর্তন শিল্পকলা একাডেমিতেও হয়নি। ফলে যারা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক ও দোসর, তাদের কেউ কেউ এখনো প্রতিষ্ঠানটিতে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। বলা বাহুল্য, কোনো প্রতিষ্ঠানের শুধু প্রধান ব্যক্তিকে পরিবর্তন করলে হবে না, সেখানে কারা বিগত সরকারের স্বার্থ হাসিলে নীরবে নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের আগে দরকার অনুকূল পরিবেশ। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোয় কাজের পরিবেশ-প্রক্রিয়া-ধারা ও ফলাফল; সেই সঙ্গে মিথস্ক্রিয়াগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। অন্যথায়, সরকার যে সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে, তা পদে পদে বাধার মুখে পড়বে। অন্তর্বর্তী সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক সংস্কারেও দৃষ্টি দেবে, এটাই প্রত্যাশা।