সেনাপ্রধানের বক্তব্য : দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন সেনাপ্রধান। মঙ্গলবার ‘জাতীয় শহিদ সেনা দিবস’ উপলক্ষ্যে মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান সব পক্ষকে সতর্ক করে বলেছেন, এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখতে হলে ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ২০০৯ সালে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদর দপ্তর ‘পিলখানায় সংঘটিত নির্মম হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী শহিদ অফিসারদের স্মরণে’ এ আলোচনা সভায় তিনি দিবসটিকে বেদনাবিধুর উল্লেখ করে বলেন, এদিন শুধু ৫৭ জন চৌকশ সেনা অফিসারই নয়, তাদের কিছু কিছু পরিবারের সদস্যকেও আমরা হারিয়েছি। এসব বর্বরতার একজন চাক্ষুষ সাক্ষী উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, এই বর্বরতার সম্পূর্ণটাই তদানীন্তন বিডিআর সদস্য দ্বারা সংঘটিত। কাজেই এ বিষয়ে মনগড়া কোনো বক্তব্য সেই বিচারিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে। এই বিচারিক প্রক্রিয়া যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।
দেশ ও জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে সরকারের সহযোগিতায় সেনাবাহিনী কাজ করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ফেয়ার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশন করার লক্ষ্যে এ দেশটাকে ইউনাইটেড রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি যেন সফল হতে পারেন, সে ব্যাপারে সবাইকে চেষ্টা করতে হবে, তাকে সাহায্য করতে হবে। আমরাও মনে করি, তিনি যা বলেছেন, আমাদের সবাইকে তা অনুধাবন করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যাশার বিষয়টি তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে। তবে সেই প্রত্যাশা পূরণে রাজনৈতিক দলগুলোকে সত্যিকার অর্থেই বিভেদ ভুলে কাজ করতে হবে। নিজেদের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে; কিন্তু কোনো ক্ষোভ-অভিযোগ থেকে থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করাটা যৌক্তিক। ভুলে গেলে চলবে না, সবার উপরে দেশ। দেশের কল্যাণ ও সার্বভৌমত্বের বিষয়টি সর্বাধিক বিবেচনায় রেখে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে বিভেদ ভুলে, পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে কাজ করে যেতে হবে। দেশের বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পেছনে নানা পক্ষের বিভেদ, হানাহানির দায় যে রয়েছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে, চিন্তা-চেতনার বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু দিনশেষে সবাই দেশ ও জাতির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে যেন এক থাকতে পারি। তাহলেই এই দেশ উন্নত হবে, সঠিক পথে পরিচালিত হবে।
দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীসহ যেসব সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, কিছু সদস্যের কারণে তাদের প্রতি অভিযোগের তির ছোড়ার সংস্কৃতি থেকে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই বের হয়ে আসতে হবে। যারা অপরাধী, তাদের জন্য দেশের সংবিধান অনুযায়ী বিচারের পথ খোলা রয়েছে, বিচার প্রক্রিয়া আছে। আমরা সবাই সে ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল না হলে তাদের কার্যক্রমে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, তার জের সবাইকেই টানতে হবে। কাজেই সব ভেদাভেদ ভুলে দেশকে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে সরকারকে সহযোগিতায় সবাই আন্তরিক হবে, এটাই প্রত্যাশা।