শিশুপার্ক যখন প্রতিহিংসার শিকার
তাদের জন্য আনন্দঘন পরিবেশ চাই

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর শাহবাগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানঘেঁষে প্রায় ১৬ একর জায়গা নিয়ে ৪৬ বছর আগে ‘শহিদ জিয়া শিশুপার্ক’ গড়ে ওঠে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, পার্কটি এক সময় শিশু-কিশোরসহ সব বয়সির অত্যন্ত পছন্দের জায়গা হলেও শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে হওয়ায় বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পার্কটি ধ্বংস করে দেয়। এমনকি পার্কটির নাম-নিশানাসহ সব মুছে দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে রাতের আঁধারে পুরো পার্কের চারপাশে উঁচু প্রাচীর তৈরি করা হয়। এরপর কয়েকদিনের মধ্যেই পার্কের সামনের অংশের গেট ও নামফলক ভেঙে ফেলা হয়। এরপর ভেতরের সব রাইড, এমনকি বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে পাওয়া ‘জেট প্লেন’-সবই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, বিগত সরকারপ্রধান ক্ষমতাসীন হয়ে একক সিদ্ধান্তে পার্কটি বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির কাজ শুরু করেন। শিশুপার্ক বলতে যা বোঝায়-তা না করে পার্কের ভেতরে ৫৩ ফুট উঁচু শেখ মুজিবের ভাস্কর্যসহ পাকিস্তান সেনাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের ভাস্কর্য তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়। আন্ডারপাসসহ এসব ভাস্কর্য তৈরিতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। মুজিববন্দনা করতে গিয়ে যে ঐতিহ্যবাহী শিশুপার্কটি তার বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলছে-এ নিয়ে তখন কারও প্রশ্ন তোলার সাহস ছিল না। এ প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ হরিলুটও হয়েছে অবাধে।
শুধু নামের কারণে রাজধানীর সবচেয়ে ভালো পার্কটির এ পরিণতি মেনে নেওয়ার নয়। এ ধরনের প্রতিহিংসার ফলে শিশুরা যে বিনোদনবঞ্চিত হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। শিশুদের বেড়ে ওঠার কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। পৃথিবীর সব দেশেই এসব নিয়ম মেনে চলা হয়। শিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যে কিন্ডারগার্টেন নামকরণ করা হয়, জার্মান এ শব্দটির অর্থ হচ্ছে শিশুদের বাগান। কিন্তু আমরা দেখেছি, রাজধানীতে শিশুদের কীভাবে ইট-পাথরের দেওয়ালে আবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। গত রেজিমে রাজধানীর কোনো মাঠই শিশুদের খেলার উপযোগী রাখতে আমরা দেখিনি। বেশির ভাগ পার্ক-মাঠ হয়ে গেছে বেদখল। কিছু মাঠ-পার্কের এমনই দুরবস্থা যে, সেখানে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার পরিবেশই নেই। অনেক মাঠ কাঁটাতারের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে, কোনোটিতে আবার রিকশাভ্যানের গ্যারেজ কিংবা গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। শিশুদের শৈশবকে ফিরিয়ে দেওয়ার স্বার্থেই দ্রুত শহিদ জিয়া শিশুপার্কসহ শহরের মাঠগুলো দখলমুক্ত করা আবশ্যক। সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।