Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সক্রিয় পুরোনো সিন্ডিকেট

শর্ষের ভেতরের ভূত তাড়াতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সক্রিয় পুরোনো সিন্ডিকেট

ছবি: সংগৃহীত

বিগত সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন খাতে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে বলেই আশান্বিত ছিলাম আমরা। পরিতাপের বিষয়, তা বন্ধ হওয়া দূরে থাক, বরং সাময়িক আড়ালে থাকার পর আবারও তারা তৎপর হয়ে উঠছে। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ সেক্টরের বিতর্কিত ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখনো তৎপর রয়েছে।

তারা নানা কৌশলে বর্তমান সরকারের মেয়াদেও কাজ বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। অভিযোগ উঠেছে, বিপু সিন্ডিকেটের এমন এক সদস্যের কোম্পানিকে ৮শ কোটি টাকার কাজ দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দরপত্রে নন-রেসপন্সিভসহ বেশকিছু শর্ত ভঙ্গের অভিযোগও উঠেছে।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও আরইবি খোদ বিশ্বব্যাংকের শর্ত ভঙ্গ করেছে। এমনভাবে প্রকল্পটির ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের প্রায় ৯০ শতাংশ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। ৩৩ কেভি জিআইএস-প্যানেল প্লাগইন বসানোর সিস্টেমের প্রয়োজনীয় শর্তটি বিশেষভাবে তৈরি করা, যাতে একটি বিশেষ কোম্পানি কাজটি পায়।

এ কারণে বিশ্বের অনেক নামিদামি কোম্পানি দরপত্রে অংশ নিতে পারেনি। এসব করে আরইবির সিন্ডিকেটটির (যারা নসরুল হামিদ বিপুর আমলে ব্যাপক প্রভাবশালী ছিলেন) কোম্পানিকে দরপত্রের আর্থিক ও টেকনিক্যাল অংশের দুটিতেই কৌশলে রেসপন্সিভ দেখানো হয়। অভিযোগ আছে, বিগত সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সাবেক প্রভাবশালী পিএস সেলিম আবেদের হাত ধরে কোম্পানিটি লাইমলাইটে আসে। সংশ্লিষ্টরা অসংখ্য অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির জানিয়েছেন, সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা কঠোরভাবে দমন করা হবে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যায়, আদৌ কি তা করা সম্ভব হবে? যেখানে বিগত সরকারের আমলে একচেটিয়া কাজ করা বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো তৎপর? এখনো যে প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকোতে ২শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কার্যাদেশ পাওয়ার অপেক্ষায়। উল্লেখ্য, গত ১৭ বছর গুটিকয়েক কোম্পানি সিন্ডিকেট করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে একচেটিয়া ব্যবসা করেছে, এমন জোরালো অভিযোগ থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক তো বটেই, হতাশাজনকও বটে। কারণ দেশ এখন সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে এমন ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।

স্বচ্ছ দরপত্র প্রক্রিয়া নিশ্চিতের পাশাপাশি বিগত সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কারা সিন্ডিকেট তৈরি করে একচেটিয়া কাজ করেছে, তাদের যেমন তালিকা করা প্রয়োজন, তেমনি শর্ষের ভেতরের ভূত তাড়াতে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কিনা, এটাও খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ, এ নীল নকশার পেছনে কারা সংশ্লিষ্ট ছিল, তাদের শনাক্ত করা না গেলে এ ব্যাপারে সুফল মিলবে না বলেই মনে করি আমরা।

কোনো অজুহাত নয়, যারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, প্রত্যেককে বিচারের আওতায় না আনা গেলে পুরোনো চিত্রই বারবার জনগণকে দেখতে হবে। পাশাপাশি বিগত সরকারের আমলে হওয়া প্রকল্পগুলোরও পুনঃসমীক্ষার ব্যবস্থা করা হলে এ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির স্বরূপ অনেকাংশেই উন্মোচিত হবে। সংস্কারের অংশ হিসাবে সরকার সিন্ডিকেট দমনে যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম