Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

উইন্ডমিল খাতেও গচ্চা : দুর্নীতিতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনুন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উইন্ডমিল খাতেও গচ্চা : দুর্নীতিতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনুন

ছবি: ইন্টারনেট

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট থেকে বাদ যায়নি উইন্ডমিল বা বায়ুবিদ্যুৎ খাতও। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিদ্যুতের মুখ না দেখলেও বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে এ খাত থেকে সরকারের শতকোটি টাকার বেশি অপচয় হয়েছে। জানা যায়, রাষ্ট্রীয়ভাবে ২ মেগাওয়াটের দুটি বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। উৎপাদনের দুই বছর পর প্রথমটি এবং পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলাকালে দ্বিতীয় কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদের প্রথমদিকে বায়ুবিদ্যুৎ খাত সেভাবে বিকশিত হয়নি। বিভিন্ন নামে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল থেকে লুটপাট শেষ হওয়ার পর গত নির্বাচনের আগে সরকার এদিকে দৃষ্টি দিয়েছিল। তৎকালীন সরকার বায়ুশক্তি থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১১৫৩ মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬০ মেগাওয়াট। তবে সেটি সরকারি নয়, এসেছে বেসরকারিভাবে স্থাপিত কেন্দ্র থেকে। সেখান থেকে সর্বোচ্চ ৩০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। অপরদিকে বিগত সরকারের শেষ সময়ে বাগেরহাটে ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে মোংলা গ্রিন পাওয়ার কোম্পানি। চুক্তি স্বাক্ষরের দুই বছরের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন শুরু করার কথা থাকলেও এখনো কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এছাড়া বিগত সরকার শেষ মাসে কয়েকটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য চূড়ান্ত করে রেখে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে ওইসব প্রকল্প বাতিল করে দেয়। জানা যায়, ওইসব প্রকল্পের সঙ্গে সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীদের মালিকানার সম্পর্ক ছিল।

বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবেশবান্ধব হলেও এটি এদেশের জন্য কতটা উপযোগী, তা খতিয়ে দেখার বিষয়। জানা যায়, ১৯৮২ সালে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রথম একটি গবেষণা জরিপ চালানো হয়েছিল। ওই জরিপের প্রাথমিক গবেষণায় দেশের ৩০টি আবহাওয়া তথ্য স্টেশন থেকে বাতাসের তথ্য নেওয়া হয়েছিল। তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বায়ুর গতিপ্রকৃতি অনুসারে নয়টি স্থানকে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২০০৫ সালে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় ফেনীতে দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কিন্তু ২০০৭ সালে কারিগরি ত্রুটি, অব্যবস্থাপনা ও পর্যাপ্ত বাতাস না থাকায় এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। মোটা অঙ্কের অর্থে সংস্কার করে ২০১৪ সালে এটি আবারও চালু হয়। কিন্তু সংস্কারের কিছুদিন পর ফের বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটি। বর্তমানে অচল অবস্থায় পড়ে আছে এটি।

১ মেগাওয়াটের অপর বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটি রয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। ২০০৮ সালে এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ৬০০ গ্রাহকের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বিতরণও করা হয়েছিল। তবে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ বিতরণের পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম দফায় সংস্কারের পর কিছুদিন চলে। একপর্যায়ে পুরো কেন্দ্রটি অচল হয়ে পড়ে। নির্মাণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রটির জন্য সরকারের ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এভাবে অর্থ খরচকে অপচয় বলেই মনে করি আমরা। এ বিষয়ক গবেষণা জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও কেন প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়ল, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব প্রকল্পের দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম