শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় ভারত
এ আচরণ প্রতিবেশীসুলভ নয়

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশে বসে তার দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন; অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন। তার বক্তব্যের জেরে দেশে এরই মধ্যে ঘটে গেছে বেশ কিছু ঘটনা। কিন্তু তিনি কথা থামাচ্ছেন না; বরং হুংকার দিয়ে চলেছেন। তার বক্তব্য নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে বইছে ঝড়। তারা বলছেন, শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন। বস্তুত সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি শেখ হাসিনা বিভিন্ন বক্তৃতা ও বিবৃতি দেওয়ায় ভারতের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। এসব বক্তব্য-বিবৃতি থেকে শেখ হাসিনাকে বিরত রাখতে গত বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে তার হাতে একটি প্রতিবাদপত্র দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ও ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার পবন ভাদেকে চারবার তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দিল্লিতে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতিকে ভালো চোখে দেখছে না সরকার। এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি তাকে বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত রাখতে বাংলাদেশ লিখিতভাবে ভারতকে অনুরোধ জানালেও দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা বক্তৃতা-বিবৃতি প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য একান্তই তার ব্যক্তিগত। এর জন্য ভারত দায়ী নয়। শুক্রবার দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মো. নূরুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের পর সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন। তার এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, এতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বস্তুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারতের অস্পষ্ট অবস্থান দুদেশের পারস্পরিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের উচিত এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করা।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। শেখ হাসিনার কোনো বক্তব্যের কারণে যদি আমাদের দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাহলে অবশ্যই ভারতকে তার দায় নিতে হবে। আর যদি তারা দায় না নিতে চান, তাহলে তাদের উচিত, শেখ হাসিনাসহ ভারতে অবস্থানকারী অন্য আসামিদের বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা।