বিএসএফআইসির কারসাজি : তথ্য লুকানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) ঋণখেলাপি হয়ে পড়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ঋণের জন্য সরকারের দেওয়া গ্যারান্টির মেয়াদ পার হয়ে গেছে অনেক আগে। এরপরও প্রতিষ্ঠানটির খেলাপিসংক্রান্ত তথ্য দীর্ঘদিন ফাইলচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে, ঋণখেলাপি ঘোষণা করা হয়নি; তথ্য গোপন করে বিএসএফআইসির ঋণ অশ্রেণিকৃত করে রাখা হয়েছে। বড় অঙ্কের এ খেলাপিকে ‘স্বাভাবিক ঋণ’ হিসাবে উল্লেখ করে পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে। কাজটি করতে গিয়ে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও কৃষি ব্যাংক নানা সংকটে পড়ছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সরকারি প্রতিষ্ঠানটির ঋণখেলাপিবিষয়ক তথ্য ধামাচাপা দেওয়া হয়। এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও বিপুল অঙ্কের ঋণকে ‘স্বাভাবিক ঋণ’ হিসাবে দেখানোর ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছে তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩২টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির অঙ্ক ১৮৩ কোটি টাকা। বর্তমান হিসাবে এ অঙ্ক আরও বাড়বে। তবে গোপন করা খেলাপি ঋণের অঙ্ক যোগ হলে তা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
ঋণখেলাপি হওয়া সত্ত্বেও সংস্থাটির ঋণ অশ্রেণিকৃত করে রাখায় এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। কেন এমন বিপুল অঙ্কের সীমাহীন ঋণ গ্রহণ করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বাড়তি সুবিধা অর্জন করেছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। মূলত ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার সময় অর্থ মন্ত্রণালয় গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। উল্লিখিত ঋণ ইস্যুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে গ্যারান্টি দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিএসএফআইসি। এ গ্যারান্টি পেয়ে ব্যাংকগুলো ঋণ ইস্যু করেছে। জানা যায়, ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে নতুন করে গ্যারান্টি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয়কে। তবে ওই চিঠিগুলোর কোনো জবাব মেলেনি। ফলে ব্যাংকের হিসাবে এসব ঋণ এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় ঋণকে খেলাপি না দেখিয়ে এখনো স্বাভাবিক ঋণ হিসাবে দেখানো হচ্ছে। এটি বৈষম্যমূলক। এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে নিরীক্ষা করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।