ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি
সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনায় নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত বাস্তবায়নে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ভোক্তার আয় কমায় পণ্যের বিক্রি কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে। এদিকে শিল্পের খরচ বেড়ে গেছে। ফলে শিল্প টিকিয়ে রাখাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। পণ্য ও সেবা নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার কিছু খাত থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তা করছে বলে জানা গেছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৩ সালে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে আইএমএফের সঙ্গে। চুক্তির আগে থেকেই তৎকালীন সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে শর্তের বাস্তবায়ন শুরু করে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। ঋণ গ্রহণের পরও শর্ত বাস্তবায়ন করতে গ্যাস-বিদ্যুৎ-সারসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানোয় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই স্বল্প-আয়ের মানুষ কষ্টে দিনযাপন করছে। সম্প্রতি চড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে এবং অর্থনীতিকে শৃঙ্খলায় আনতে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন করা হলেও মূল্যস্ফীতি কমেনি, বরং বেড়েছে।
বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে ব্যাংক খাতে পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে; অর্থ পাচার হ্রাস পাওয়ায় ডলার সংকট অনেকটা কমেছে। কিন্তু অর্থনীতির অন্যান্য সূচক আশাব্যঞ্জক নয়। মূল্যস্ফীতির হার কমাতে গত তিন অর্থবছর ধরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মুদ্রানীতি আরও কঠোর করা হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে প্রবৃদ্ধি মাত্র দেড় শতাংশে নেমেছে। বস্তুত ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, শ্রমিক অসন্তোষ, ডলার সংকট, গ্যাস-বিদ্যুতের উচ্চমূল্য এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে ঘাটতি-এসব কারণেও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমেছে।
যেহেতু কর্মসংস্থানের ৯৫ শতাংশই হচ্ছে বেসরকারি খাতে, সেহেতু এ খাতকে চাঙা করার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার; বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে শিল্প খাতেও এর প্রভাব পড়ে। কাজেই নিত্যপণ্য ও অত্যাবশ্যকীয় সেবা যাতে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনায় নেবে, এটাই প্রত্যাশা।