নগর উন্নয়নে তদবিরের চাপ
কাজের মানের ক্ষেত্রে কোনো আপস নয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর নগর সংস্থাগুলোর দরপত্রে নানামুখী তদবিরের বিষয়টি বিগত সরকারের আমলে প্রকট আকার ধারণ করেছিল। পরিতাপের বিষয়, এ চিত্র এখনো বদলায়নি। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-কেনাকাটা, সেবা ও উন্নয়নকাজের দরপত্রে তদবিরের চাপে কাবু হয়ে পড়েছেন প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা। সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও নানাভাবে তদবির করছেন। কাজের তুলনায় তদবিরের পরিমাণ বেশি হওয়ায় আগ্রহীরা দরপত্র আহ্বানকারীদের ওপর অসন্তুষ্ট হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন যারা দরপত্রে অংশ নিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশেরই অভিজ্ঞতা নেই। কারও কারও কাজের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণাও নেই। তবুও তারা কাজ পেতে চাচ্ছেন। যে কোনো মূল্যে কাজ দিতে প্রকৌশলী-কর্মকর্তাদের চাপ দিচ্ছেন আগ্রহী ঠিকাদাররা। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্তরা। বিভিন্ন দলের নেতারাও ওইসব ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার অনুরোধ করছেন। কেউ কেউ বড় নেতাদের নামও ভাঙাচ্ছেন। এছাড়া অভিযোগ আছে, বিভিন্ন উপদেষ্টা, বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা অনেকের জন্য তদবির করেছেন। তদবিরগুলো অগ্রাহ্য করার মতো নয়, আবার আইন অনুযায়ী তাদের সুবিধা দেওয়া যায় না। এ ধরনের জটিলতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন নগর সেবা সংস্থার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা।
জানা যায়, কর্মকর্তারা বহিরাগতদের জন্য নিজেদের কাজটিও ঠিকমতো করতে পারেন না। দরপত্র আহ্বানের পর যারা কাজ পাচ্ছেন, তারা খুশি হচ্ছেন; আর যারা পাচ্ছেন না, তারা দায়িত্বপ্রাপ্তদের হুমকি-ধমকি, এমনকি মৃত্যুর হুমকিও দিচ্ছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ওয়ার্ডভিত্তিক আবর্জনা পরিষ্কারের দরপত্র হয়েছে। সেখানে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ পেতে তুমুল লড়াই হয়েছে। পট পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত হওয়ার পর একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও এসব কাজ পাওয়ার জন্য তৎপরতা চালাতে দেখা গেছে। এসবকে কেন্দ্র করে ডিএনসিসির নগর ভবন রীতিমতো ‘বাজারে’ পরিণত হয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোয়। এ অবস্থায় এসব দপ্তরের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা খুবই শঙ্কায় দিনাতিপাত করছেন। বেশি লোকের জটলা এবং ভীতিকর পরিবেশ উপলব্ধি করলে অফিস থেকে বেরিয়ে যান কেউ কেউ; কেউবা ফোন বন্ধ করে রাখছেন।
দরপত্র কাজের স্বচ্ছতার স্বার্থে পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে রাজধানীর নগর সংস্থাগুলোর কার্যালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা জরুরি। প্রভাবশালীদের যারা ফোনে সুপারিশ করছেন, তাদেরও এ ধরনের অন্যায় কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করি আমরা। নিয়মের মধ্য থেকে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পেশাদারির সঙ্গে কাজ করে থাকে, তারা কাজের গুণগতমান বজায় রাখতে পারবে, ফলে কাজও ভালো হবে। যেহেতু অতীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বাগিয়ে নিয়ে নিম্নমানের কাজ করে এসেছেন, তাই কর্তৃপক্ষের উচিত যাচাই-বাছাই করে শুধু যেসব প্রতিষ্ঠান সততা, স্বচ্ছতা ও পেশাদারির সঙ্গে কাজ করে থাকে, অতীতে যাদের কাজের সুনাম রয়েছে, তাদেরই তালিকাভুক্ত রাখা। কারও চাপে নয়, উন্নয়নকাজে নগর সংস্থার প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা নির্ভীকতার সঙ্গে তাদের স্বীয় কাজ সম্পাদন করবেন, এটাই কাম্য।