বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা: যাত্রীরা কতকাল নিগৃহীত হবেন?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলো বিদেশ থেকে এদেশে ঢোকার প্রবেশদ্বার, একই সঙ্গে দেশের বাইরের বাকি অংশে যাওয়ার বহির্গমন দ্বার। সুতরাং এ বিমানবন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অধীনে থাকা বিমানবন্দরটির নিরাপত্তাব্যবস্থা খুব নাজুক হয়ে পড়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ এভিয়েশন সিকিউরিটি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা যেন এ কর্তৃপক্ষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যাত্রীদের হেনস্তা করার মধ্যে এক ধরনের গৌরব রয়েছে। বিশ্বাস করা কষ্টকর, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাত্রীদের মারধরও পর্যন্ত করছেন এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। আক্রমণটা হচ্ছে প্রধানত প্রবাসীদের অর্থাৎ রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ওপর।
সম্প্রতি নরওয়েপ্রবাসী এক পরিবারের সদস্যদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রবাসীরা শুধু মর্মাহতই হননি, তারা ব্যাপক ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তাদের ওপর হামলার ভিডিও ক্লিপ ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নিন্দার ঝড় বইছে নিরাপত্তা কর্মীদের বিরুদ্ধে।
বেবিচকের চেয়ারম্যান বলছেন, তারা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আরও বলেছেন, প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী ও তাদের স্বজনরা বিমানবন্দরে আসেন বলে দু-চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। তার এ কথা মেনে নেওয়া কষ্টকর। দু-চারটি নয়, বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি ও শারীরিক লাঞ্ছনার ঘটনা হরহামেশাই ঘটে চলেছে। কথার দুর্ব্যবহার সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রবাসীরা দেশে ফেরেন দীর্ঘ ক্লান্তিকর যাত্রা শেষে। বিমানবন্দরে নামার পর যদি তারা দুর্ব্যবহারের শিকার হন, তখন তাদের কেউ কেউ প্রতিবাদ করতেই পারেন। কিন্তু প্রতিবাদ করা হলেই দেখা যাচ্ছে তাদের ওপর চড়াও হচ্ছেন দায়িত্বরতরা। যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া, নারী যাত্রীদের গায়ে হাত তোলা, ক্যানোপির ভেতর যাত্রীদের স্বজনকে প্রকাশ্যে মারধর এবং মানব পাচারকারীকে ধরে ছেড়ে দেওয়ার মতো অপেশাদারসুলভ ঘটনার অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
আমরা বিমানবন্দরে সব ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার অবসান দাবি করছি। উপরে যেসব ঘটনার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে সর্বদা দৃষ্টি রাখতে হবে। শুধু বেবিচক নয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও দায়িত্ব এড়াতে পারে না। ভবিষ্যতে বিদেশগামী ও বিদেশফেরত, উভয় যাত্রীরা স্বচ্ছন্দে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে পারবে, এটা সবারই চাওয়া।